A TRAIN TO NIAGRA
কলমেঃ মহিউদ্দিন আলমগীর
অনুমান করে একটি কম্পার্টমেন্টে উঠি। এ পর্যন্ত ইউরোপের ট্রেনে, আমার নিজের বগিতে খুব কমই উঠতে পেরেছি। আর আমেরিকায় এই প্রথম কোন ট্রেনে উঠলাম। বিদেশে গিয়ে যখন ট্রেনে অভ্যস্ত হই, তখনই দেশে ফেরার সময় চলে আসে। এখানেও নিজের বগিতে উঠতে পারলাম না, খালি সিট পেয়ে বসে পড়লাম। চেকার আসলে জিজ্ঞাসা করলাম, ঠিক আছে কি না? মুচকি হেসে বলল, নো প্রবলেম।
শফিকের উৎসাহে, সিদ্ধান্ত নিলাম নায়াগ্রা যাওয়ার। হোটেল বুকিং দিয়ে ট্রেনের শিডিউল দেখছিলাম। সূচী দেখার পর আর সময় নষ্ট করলাম না। বাফেলো যাওয়ার ট্রেন দুপুরের আগে, বাকী ট্রেন রাত আটটার পর। দ্রুত চলে আসলাম ষ্টেশনে। টিকেট কেটে প্লাটফর্মে পৌঁছাতে একটু সময় লেগে গেল। তখন ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পথে।
ট্রেনে উয়াই-ফাই না থাকায়, হোটেল কনফার্মেশন জানার উপায় রইলনা। আমার রোমিং নাম্বার আবার গতকাল থেকে কাজ করছে না। অভিযোগ দিয়ে রেখেছি। তাঁরা বলেছে, মোবাইল অফ করে অন করতে। যদি কাজ না করে তাহলে চব্বিশ ঘন্টা সময় লাগবে।
ইন্টারনেট না থাকায় একদিক দিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে। ছেলেমেয়েরা বাধ্য হয়ে গল্পগুজব করতে লাগল।
জানালা দিয়ে তাকালে নদী দেখা যায়, রেললাইনের পাশাপাশি চলছে। নদীর সৌন্দর্য্য বেশ উপভোগ্য, সাথে পাহাড় থাকায় তা আরও উপভোগ্য হয়ে উঠল। পাহাড়ের গায়ে নানান রঙের ম্যাপল ট্রি প্রকৃতিকে আরও রঙিন করে তুলেছে!
পরে জানলাম এটা ইরি খাল। পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম এ খাল, হাডসন নদীকে ইরি লেকের সাথে যুক্ত করেছে। মূলত মালামাল পরিবহনের জন্য খালটি খনন করা হয়েছিল।
কামারাতে বেশকিছু সিট দেখলাম টেবিলসহ। যখন খালি হল, বসে পড়লাম সেখানে। লাঞ্চের সময় আরাম করে খেতে পারলাম। বাকী সময়টায় ফাঁকে ফাঁকে ব্ল্যাক কফি। স্ত্রী বললঃ
নায়াগ্রা দেখতে কি রকম?
উত্তরে বললামঃ
দূরদেশ সিনেমায়, ‘যেওনা সাথী’ গানে প্রথম নায়াগ্রা দেখেছি। এ নিয়ে টেলিভিশনে একটা সিনেমাও দেখেছি। শুকনা মতো এক লোককে পিপায় ভরে নায়াগ্রা নদীতে ছেড়ে দেয়। পিপাটি ভাসতে ভাসতে উপর থেকে পড়ে যায়। নায়িকা তখন খুবই উৎকন্ঠিত। পূর্বে যারাই এরকম করেছে, তাঁরাই মারা গেছে।
পড়ার পর ঢাকনা খোলা হলে দেখা গেল সে জীবিত আছে। লোকটি হাত নাড়লে সবাই তালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানায়। ছবিটি তৈরী হয়েছিল সত্য কাহিনী অবলম্বনে।
পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত এটি। সবচেয়ে উঁচু হল আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া। যেহেতু দ্বিতীয়, তাই দেখতে আহামরি বিশ্ময়কর কিছু হয়তো হবেনা। আজ না হলেও কাল তো দেখবই, এখন চিন্তা করে আর কি হবে!
দুশ্চিন্তার অবসান
স্ত্রী’কে বারণ করলেও, আমার মনে ঠিকই নায়াগ্রা ভেসে উঠল। পাহাড় থেকে বিশাল জলরাশি পড়ছে, কানফাটা গর্জনে কোন কথা শোনা যায়না। সবাই শুধু ইশারায় কথা বলছে। আমি আর আমার স্ত্রী হেঁটে যাচ্ছি পাশাপাশি। আমরাও ইশারায় কথা বলে দুজনেই হেসে উঠছি! মাঝে মাঝেই পানির ছিটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের।
-বাবা!
চিন্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মেয়ে ডাকছে।
-জ্বী মা।
-আর কতদূর?
-জিজ্ঞাসা করে দেখি।
সূর্য হেলে পড়ছে, মনটাও হেলে পড়ল। হোটেলের চিন্তাটাও ভর করল । বুকিং কনফার্মড না হলে কি করব! কল্পনায় দেখতে পেলাম, লাগেজ হাতে হোটেল থেকে হোটেলে রুম খুঁজে বেড়াচ্ছি।
বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে বাইরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে না, চারিদিকে শুধু সমতল ভূমি নজরে এল। চেকার বলল, বাফেলো পৌঁছাতে আর বেশী সময় বাকী নেই। দুশ্চিন্তা জেকে বসেছে, স্বপ্ন না দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়! ছোটভাইয়ের কল আসল।
-তোমার মোবাইল অফ কেন?
-অফ না রোমিং সমস্যা।
-তাহলে এখন গেল কিভাবে?
-প্যাঁচাল বন্ধ কর, এখন টেনশনে আছি।
-টেনশন দূর করার জন্যই তো প্যাঁচাল পারতাছি।
-মানে!
-মানে, তোমার হোটেল বুকিং কনফার্মড।
-আরে আগে বলবা তো!
-বলার সুযোগটা দিলা কই। এখন রাখি, তোমাদের জন্য সবকিছু করতে গিয়া, আমারতো এখন টোয়েন্টি আর টোয়েন্টি।
-হাসলাম ওর কথায়। শরীরে ব্যাথা হলে গ্রামের বয়স্ক লোকেরা বলে, ‘শইলে বিষ আর বিষ’। কবে যে ও শুনেছে এ কথা আল্লাহ মালুম। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই এ ডায়লগ মারে।
প্লাটফর্মে যখন নামি, তখনও সূর্যের আলো আছে। ষ্টেশন থেকে বের হয়ে দেখি অন্ধকার। হোটেলের ঠিকানা দেখিয়ে ট্যাক্সি নিলাম। ট্যাক্সি হলিডে ইন হোটেলের গেটে নামিয়ে দিল, আশায় ছিলাম ট্যাক্সি থেকে নেমে জলের গান শুনবো। নাহ্, সেরকম কিছু শুনলাম না।
একটু হতাশই হলাম।
নায়াগ্রা কোথায়?
ভাবলাম পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যই বলা, নায়াগ্রা সংলগ্ন। বাস্তবে হয়তো দূরে। চেক ইনের সময় ইচ্ছে করল রিসিপশনকে জিজ্ঞাসা করি। সাত ঘন্টার বুকিংয়ে হোটেল পেয়েছি, এতেই আপাতত খুশি।
হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামলাম। হোটেলর নিজস্ব রেস্টুরেন্টে খাবার মেনু দেখলাম। ভুড়ি ভোজনের উপযুক্ত আইটেমের অভাব। বের হয়ে ডানে হাঁটা দিলাম, কিছুই চিনিনা। রাস্তাঘাট নীরব, গাড়িঘোড়া কম, লোকজনের চলাফেরা আরো কম। সবার ক্ষুধা লেগেছে। টুরিষ্ট এলাকা, রেস্টুরেন্টের অভাব হবে না। কিন্তু কোথায় খাবারের দোকান, কোথায় রেস্টুরেন্ট। অন্যদিকে কি?
কিছুদূর যাওয়ার পর পুরোনো ইউরোপিয়ান ঢংয়ে বানানো একটা চার্চ দেখলাম। জমি থেকে ফোকাস করা আলোতে রহস্যময় দেখাচ্ছে চার্চটিকে। চার্চের সামনে দাঁড়িয়ে আমার ছেলে বললঃ
বাবা! ঐ যে টনি রোমাস।
-কই? বলেই ঘুরে তাকালাম।
টনি রোমাস একটি নামকরা চেইন রেস্তোরা। মূলত মাংসজাতীয় আইটেমের জন্য বিখ্যাত। বেশ সুস্বাদু খাবার। কিছু আইটেম খাওয়ার জন্য পাতলা পলিথিনের পোশাক পড়তে হয়। সেরকম একটি আইটেম হল, ‘চেষ্ট রিব’ অর্থাত সিনার হাড্ডি। আমার ছেলে অর্ডার করেছিল।
ডিনার শেষে ফিরছি। স্ত্রীকে বললামঃ
হোটেল বুকিংয়ের সময় দেখেছিলাম, এটি নায়াগ্রা ফলসের কাছে। সেই হিসাবে আমরা নায়াগ্রার কাছেই, কিন্তু শব্দ পাই না কোন ? রাস্তাঘাট ফাঁকা, এমন না যে গাড়ির শব্দে চাপা পড়ে গেছে।
স্ত্রী বললঃ
হয়তো শহরের অন্যদিকে, বিল্ডিংয়ের জন্য দেখা যাচ্ছে না!
-না, এখানে তেমন উঁচু কোন ভবন নাই। ষ্টেশন থেকে খেয়ল করেছি কোন পাহাড় নাই। ধরো পাহাড় আছে, আমার চোখে পড়ে নাই। কিন্তু দেড়দুইশ ফুট উঁচু থেকে বিপুল পরিমাণ পানি পড়ার কোন শব্দ থাকবে না!
নতুন উপাখ্যান
ঠিক করলাম হোটেলে ফিরে কাউকে জিজ্ঞাসা করবো। কিন্তু কাউকে পেলামনা। না রিসিপশন, না সিকিউরিটি! না হোটেল রেস্টুরেন্টের কেউ। লবিতে শুধু আমরা চারজন। মনে হল হলিউড সিনামার মতো কোন ভৌতিক জায়গায় এসে পড়েছি।
মেয়ে বললঃ
বাবা! চল রুমে যাই। এখানে ভয় লাগছে।
– মা, ভয়ের কিছু নাই। এ এলাকা হাইলি সিকিউরড। চারিদিকে ক্যামেরা আছে, কেউ কিছু করে পার পাবেনা।
স্ত্রী বললঃ
রাখো তোমার ক্যামেরা। কোন ঝামেলা হলে ক্যামেরা দিয়ে হবে!
হেসে দিলাম। অপেক্ষা করার জন্য ইউরোপের একটা অভিজ্ঞতার কথা বললাম।
ঠিক দশবছর আগে সুইডেনে, ভূল করে একটি ষ্টপেজে নামলাম। জায়গার নাম এলভেস্তা, শহরতলি এলাকা। আমাদের মিটিং হবে বোরাস শহরে। বায়ারের অফিস বোরাস থেকে দূরে তবে এলভেস্তার কাছে।
মিটিং শেষে সরাসরি ষ্টকহোম চলে যাব। সেখানে রাত্রিযাপন করে পরেরদিন ভোরে এয়ারপোর্ট, ফ্লাইট ভোর আটটায়।
শীতের সময় ইউরোপে দ্রুত রাত হয়। ঘড়িতে সাতটা বাজে, অথচ গভীর রাতের অনুভুতি। পকেট থেকে ম্যাপ বের করলাম। দেখা যাচ্ছে ষ্টপেজের পাশেই হোটেল। কিন্তু বাস্তবে দেখছি জঙ্গল। দুই একটা ব্যক্তিগত গাড়ি চোখে পড়ল কিন্তু ট্যাক্সি ক্যাব একদমই নেই। কাউকে যে লোকেশনটা দেখাব সেই লোকটাও নাই।
তাপমাত্রা দেখেছি রাতে মাইনাস ছয় সাত ডিগ্রি। কিছুক্ষণের মাঝেই কাপুনী ধরল। একজন লোককে আসতে দেখলাম। তাঁকে হোটেলের নাম বলতেই আধা ভাঙ্গা ইংরেজীতে বললঃ
এটা হোটেলের আগের ষ্টপেজ। তবে এখান থেকেও যাওয়া যায়। দশ-পনের মিনিট হাঁটার পথ।
এরপর ম্যাপে সে দেখিয়ে দিল কিভাবে যাব। তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বললামঃ
পরের বাস আসতে কত সময় লাগবে?
– এক ঘন্টা!
এই শীতে দাঁড়িয়ে থাকলে কখন যে ষ্ট্যাচু হয়ে যাব টেরও পাবনা। তারচেয়ে হাঁটা উত্তম। তাঁর দেখানো রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছি। দুইপাশে গাছপালা, একা আমি! গাছপালা ক্রমেই জঙ্গলে রূপ নিল। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে এল, চারিদিকে ভৌতিক একটা আবহ।
মানলাম সুইডেনের মানুষজন ভদ্র, তাই বলে কি জন্তু জানোয়ারেরাও ভদ্র! যেরকম পশুপ্রেমিক এরা! শিয়াল বা শূকর যে আশেপাশেই ঘুরছে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
ষ্ট্রিট লাইটের ক্ষীণ আলোতে আরো কিছুক্ষণ হাটলাম। পথিকের বক্তব্য অনুযায়ী এতক্ষণে ডানে একটি রাস্তা পাওয়ার কথা। কিন্তু নাই, শুধু পাইন গাছের জঙ্গল। মনোবল কমে এসেছে, অচেনা নির্জন রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছা করছে না। সিদ্ধান্ত নিলাম ফিরে যাব আগের জায়গায়। এমন সময় হেডলাইটের আলো দেখতে পেলাম। হাত দিয়ে ইশারা করে গাড়িটি থামাই। হায়, হ্যালো করে বললামঃ
আমার লিফট প্রয়োজন, তুমি যেদিকে যাচ্ছ সেদিকেই নামব।
সে বললঃ
কিন্তু তুমি তো হাঁটছ উল্টোদিকে!
-হ্যা, কারণ এই হোটেলে যাব, কিন্তু রাস্তাঘাট চিনি না!
-কিছু মনে করোনা, আমি যদি তোমাকে হোটেলে নামিয়ে দেই এটা কি ভাল হয়না।
-অবশ্যই অনেক ভাল হয়! ইট উইল বি সো কাইন্ড অব ইউ।
এই হল সভ্য দেশের নমুনা। আমরা এখন তো হোটেলেই আছি, কাজেই তোমরা নিশ্চিন্তে থাকত পার।
স্ত্রী ততক্ষণে হোটেলে আর নাই। আমার দূঃখে চলে গেছে সুইডেনের জঙ্গলে!
পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত নায়াগ্রা
পরের দিন ভোরে উঠলাম। ছেলেমেয়েরাও আসল আমাদের রুমে। সবাইকে বললাম, হোটেলের বাইরে নাস্তা খাব। হোটেলের অন্য এক্সিট দিয়ে বের হয়ে গতকালের উল্টোদিকে গেলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি বেশকিছু পিৎজার দোকান। দেখামাত্র ছেলেমেয়েরা অর্ডার দিয়ে বসে পড়ল। রাস্তার অপরদিকে দেখলাম কয়েকটি ষ্ট্রিটফুড ভ্যান।
টিভিতে তখন ষ্ট্রিট ফুড নিয়ে প্রায়ই অনুষ্ঠান দেখায়। কৌতুহলে আমরা দুজন সেখানে গেলাম। ভ্যানের মালিক বাংলাদেশী। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে ফূড ভ্যানটি পরিচালনা করে। দুজনেই হাসিখুশি, বাড়ি রাজশাহীতে। শর্মা খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলাম, নায়াগ্রা কোনদিকে। বললঃ
কাছেই! রাস্তার শেষ মাথায় ঐ যে পার্ক। পার্ক দিয়ে হেঁটে গেলেই নায়াগ্রা দেখতে পাবেন।
স্ত্রী’র দিকে বোকা হয়ে তাঁকিয়ে রইলাম। এতো কাছে!
ছেলেমেয়েরা খাওয়া শেষ করেছে। তাঁদেরকে দূর থেকে ইশারায় আমাদের অনুসরণ করতে বলে পার্কের দিকে হাঁটা দিলাম। পার্কে গাছপালা অনেক, কান খাড়া করে হাঁটছি, কিন্তু এত কাছে থেকেও কোন শব্দ নাই!
স্ত্রীকে না বলে পারলাম না। স্ত্রী দাঁড়াল, বুঝার চেষ্টা করল। তারপর বলল একটা হালকা ঝিরিঝিরি শব্দ সে পাচ্ছে।
-কই? আমি তো পাচ্ছি না!
-ভাল করে শোনার চেষ্টা করো।
ছেলেমেয়ে এসে পড়েছে আমাদের কাছে। এসে বললঃ
কি ব্যাপার! তোমারা দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– ফারিসা, তোমারা কোন পানির শব্দ পাচ্ছ?
মেয়ে উত্তর দিলঃ
হ্যা বাবা। পানি তো দেখাও যাচ্ছে। বাদিকে গাছের ফাঁক দিয়ে তাকাও।
সত্যিই তো! সম্পূর্ণ নদী দেখা না গেলেও নদীর একপাশ দেখতে পেলাম। তাহলে তো গর্জন শোনার কথা। হিসাব মিলে না, কোথায় যেন গড়মিল।
স্ত্রী আনন্দে বললঃ
শব্দ কেন নাই, চিন্তা না করে! এগিয়ে যাই। একটু পরেই সব বুঝতে পারবে।
চারজনে টিকিটে দিলাম একশত বিশ ডলার। পেভমেন্ট ধরে সোজা এগিয়ে যাচ্ছি। বোঝাই যাচ্ছে এদিকে পার্কের শেষ মাথা, উঁচু গাছ কমে এসেছে। এসে দাঁড়ালাম এক উন্মুক্ত প্লাজাতে, সামনে বিস্তৃত দিগন্ত।
বায়ে অদূরেই নদী। তীব্রবেগে পানি ধেয়ে যাচ্ছে। দেখে ভয় ধরে যায়। বাতাস নেই, তবু পানি ফুলে ফেপে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢেউ দেখে আমার চোখ উঁচুতে উঠে আবার নীচুতে নামে। তারপর পানি বেশ উঁচু হয়ে ফুলে উঠল, এ বড় ঢেউয়ের পর আর নাই!
তীব্র বাক খেয়ে কিছুটা শূণ্যে উঠে বিশাল নদীটা আছড়ে পড়েছে। প্রপাতের বাকি অংশ চোখে ধরা না দিলেও নীচের নদীটি ধরা দিল। প্রায় দেড়শ ফুট নীচের খাদে নদীটি বয়ে চলেছে। পানির গর্জন না শোনার কারণ এখন পরিষ্কার হল। সবসময়ই ভেবেছি পানি উপর থেকে নীচে পড়বে। চিন্তা করিনি পানি মাটি থেকে খাদে পড়বে! অতঃপর শব্দ খাদেই আটকা!
এখানে নদীটি দক্ষিণ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে বয়ে যাচ্ছে। জলপ্রপাতটি পূর্ব থেকে এসে নদীটির উপর লম্বভাবে পড়েছে। উজানে তাকাই, দূরে সাদা মেঘ। বিস্মিত হলাম, মেঘের ফাঁক গলিয়ে আরেকটি জলপ্রপাত দেখে। বিপুল পরিমাণ জলরাশি নীচে পড়ে অসংখ্য জলীয় কণার সৃষ্টি করে। জলীয় কণারা বাতাসে ভর করে ভেসে বেড়ায়। দূর থেকে মনে হয় সাদ মেঘ স্রোতের টানে পানিতে ভেঙ্গে পড়ছে।