ভুতু কাহানী পর্ব ৭ । প্রকৃতি ও পশু প্রেমী

ভুতু প্রকৃতি ও পশু প্রেমী বিড়াল। আমাদের বাসায় পাঁচটা বারান্দা। ভুতু বারান্দায় গাছের মাঝে গিয়ে বসে থাকবে। কখনো কখনো বারান্দার চেয়ার বা টুলে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকবে। বাতাস বা বৃষ্টি হলে বারান্দার গ্লাসের পাশে বসে বৃষ্টি দেখে। অনেকক্ষণ বসে থাকে। মনে হয় কয়েকশ কবিতা ভুতু লিখে ফেলেছে। কিন্তু বজ্রপাতের শব্দ খুব ভয় পায়। দৌঁড়ে খাটের নিচে। 

আমার নিচ তলায় কবুতর পোষে। আমাদের একটা বারান্দা থেকে তা দেখা যায়। ভুতু বারান্দায় বসে বসে তাদের দেখে। এই দেখে আমার দেবর তার এক জোড়া কবুতর আমাদের জন্য নিয়ে এলো। ভুতু ঐ কবুতর দেখে তাদের কাছ থেকে আর সরে না। কবুতরকে ধরতে যেতে চায়। কবুতর ভয়ে উড়ে যায়। এই করতে করতে একটা কবুতর হারিয়ে গেলো। 

বাসার বারান্দায় প্রায় কাক, পাখি আসে। তাদের জন্য মগে পানি দেওয়া থাকে। ভুতু ওই পাখি আর কাক দেখার জন্য বসে থাকে।  পাখি দেখার জন্য ফ্রিজের উপর গিয়ে বসে থাকে। কারণ ফ্রিজ যেখানে রাখা আছে তার সাথে বাহিরের একটা দেওয়ালে পাখির বাসা আছে। ভুতু কিভাবে যেন তা দেখেছে। যখনই তাদের কিচির মিচির শুনতে পায় তখনই ফ্রিজের উপর গিয়ে বসে থাকে আর তাদেরকে দেখে।

একদিন বাসায় একটা পাখি কিভাবে যেন উড়ে এলো। পাখিটা আহত ছিলো তাই উড়তে পারছিলো না। বাসায় একটা খাঁচা ছিলো। আমাদের সহকারী পাখিটা যত্ন করে সুস্থ করে তুলল। ভুতু পাখিটা আসার পর থেকে তার খাঁচার সামনে বসে থাকে। পাখিটা খুব চঞ্চল ছিলো। ভুতু বাহির থেকে তাকে ধরার চেষ্টাও করে। 

মাছ প্রিয় ভুতু

তাকে বেশ কয়েকবার ছাড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ছেলে মেয়েরা বললো ছেড়ে দিলে বড় পাখিরা খেয়ে ফেলবে, আবার আগের মতো আহত হয়ে আসবে। তাই তার জন্য সঙ্গী কিনে আনলাম। সঙ্গী পেয়ে একটু কম বের হতে চায়। আর ভুতু সারাদিন রাত তাদের খাঁচার সামনে বসে থাকে, ওখানেই ঘুমায়।

পাখিটার জন্য আরো একটা পাখি নিয়ে আসলাম। নতুন পাখিটা খুব শান্ত। কিন্তু আগের পাখিটা অনেক দুষ্ট। সে অনেক চেঁচামেচি করে আর খাঁচা কামড়াতে থাকে। 

দুঃখের বিষয় নতুন, শান্ত পাখিটা একদিন মারা গেল, এরপর আগের পাখিটাকে ও ছেড়ে দেওয়ার সিদ্বান্ত নিলাম। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলে থাকবে। তার খাঁচার দরজা খুলে দিলাম। একদিন পর উড়ে চলে গেল। পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখতে হয় দেখে আমার কখনো পাখি পোষা ভালো লাগে না।

ছোট বেলায় আমাদের কথা বলা ময়না ছিলো। সে পাখিটা শুধু আমার মা আর আমাকে ডাকতে শিখেছিলো। সে পাখিটা কথা শিখতে শিখতেই মারা গেল। খুব মন খারাপ হয়েছিলো। এরপর আর কখনো পাখি পোষার ইচ্ছে হয়নি।

নামাজী ভুতু

ভুতুর বাজে অভ্যাসগুলো

প্রায় সময় সে আমার ছেলের রুমে ঘুমায়। রাত একটার দিকে তার রুমের সামনে গিয়ে ম্যাও করে, আমার ছেলেও কিভাবে যেন ওর শব্দ টের পায়। ভুতু তার রুমে ঘুমাবে। আর মাঝ রাতে তার কানের কাছে গিয়ে ম্যা করে উঠিয়ে দেবে যেন তার গলার নিচে চুলকিয়ে দেয়, তারপর সে ঘুমাবে। ফজরের নামাজের সময় উঠে যাবে। তখন তাকে খাওয়া দিতে হয়। খাওয়া দিয়ে এলে খাবে না। তার খাবারের সময় আমাকে পাশে থাকতে হয়, না হলে খাবে না। মনে হয় ভয় পায়, একটু পর পর মাথা উঠিয়ে দেখে তার পাশে কেউ আছে কিনা। গভীর রাত আর ভোর রাতে তার এই কান্ড সহ্য করতে হয়, যখন যে জেগে থাকে তারই বসে থাকতে হয় তার খাওয়ার সময়।

মাঝে মাঝে আমার রুমে রাতে থাকে। তখন তার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমার বেডসাইট টেবিলে উঠে ম্যা করবে যেন আমি উঠি। এরপর তার গলা চুলকিয়ে তাকে ঘুম পাড়াতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তার মনমতন চুলকানো না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চুলকাতে হয়। এরপর হাত চেটে দিবে। তারপর আমার বালিশের পাশে ৫-১০ মিনিট ঘুমাবে। যখন দেখবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তখন টুক করে নেমে যাবে, নিজে ইচ্ছে মতন জায়গায় গিয়ে ঘুমাবে। 

তার জন্য আলাদা করে একটা তোশক বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওটা তে কদাচিৎ ঘুমাবে। নিজের ইচ্ছে মতন চলে।

মাঝে মাঝে ভুতুকে মাঝরাতে পাওয়া যেত না। খুঁজতে গিয়ে দেখি সে আমাদের ১৩ তলার বাসার বাইরে রেলিং এ বসে আছে। অনেক ডাকাডাকির পর অতি সাবধানে চিকন রেলিং দিয়ে হেঁটে ফিরত আসে। আমরা সবাই টেনশনে অস্থির আর ভুতু সাহেব নিশ্চিন্তে ঘরে ঢুকে খুব বিরক্ত প্রকাশ করে, কেন তার নীরবতা ভাঙ্গালাম। 

মাঝে মাঝে সে আবার বাসার বাইরে রাখা এসির কম্প্রেসারের উপর বসে থাকে। আমাদের টেনশন যদি পড়ে যায়, আর ভুতু নিশ্চিত মনে চলে আসে। ভীষণ সাবধানী। মেপে মেপে লাফ দেয়।

Leave a Comment