ভুতু দ্বিতীয়বারের মতো অপহৃত
একদিন দুপুর বেলায় আমাদের দারোয়ান ভুতুকে কোলে নিয়ে এসে বললো ভুতু অপহৃত হয়েছিল। ভুতু পালিয়ে এসে বেঁচেছে। আমি বললাম মানে?
দারোয়ান বললো, ভুতু মাঝে মাঝে রাস্তায় যায় তবে কখনো আমাদের রাস্তার বাহিরে বেশি দূর যায় না। একটু আগে দেখি ভুতু দৌঁড়ে এদিকে আসছে আর ভুতুকে ধরার জন্য পিছনে অন্য একটা লোক দৌঁড়াচ্ছে । তখন আমি ঐ লোকটাকে বললাম আপনি আমাদের বিড়ালের পিছনে দৌড়াচ্ছেন কেন?
লোকটা বললো, ও এটা আপনাদের বিড়াল! আমিতো ওকে রাস্তার দিকে পেয়ে আমাদের গাড়িতে আটকে রেখেছিলাম। আমি একটু আগে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সে দৌঁড়ে বের হয়ে গেল।
দারোয়ান ওই ড্রাইভারকে বকা দিয়ে বিদায় দিল।
ভুতু দুইবার অপহৃত হয়েও বাহিরে যাওয়া আটকাতে পারিনি। সে বারান্দার নেট খুলে নিয়মিত বাহিরে যাওয়া আসা করে । তবে নিচে বা অন্য কোথাও যায় না। আমাদের বাসার গেটে উপরে একটা পিলারের উপর ছায়ার নিচে সারাদিন বসে বসে বাতাস খায় আর মানুষের যাওয়া আসা, পাখি এসব অবলোকন করে। খাওয়া আর পটির সময় বাসা এসে খেয়ে ও পটি করে যায়। আমরাও একটু পর পর দেখি সে তার অবস্থানে আছে কিনা।
এইভাবেই ভুতুর প্রেমও বন্ধ হলো এবং একরকম সন্ন্যাস জীবন ভালবাসতে শুরু করলো।
প্রতিশোধ পরায়ণ ভুতু
একদিন দুপুরে বিড়ালের চিৎকার শুনতে পেয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি আমাদের বারান্দার সানসেডে একটা বড় বিড়াল ভুতুকে আক্রমণ করেছে। আমরা সবাই গিয়ে ভুতুকে কোন রকমে ছাড়িয়ে আনি। দেখি ভুতুর গাঢ়ে বড় বিড়ালটা কামড়ে দিয়েছে। ভুতুকে ঔষধ লাগিয়ে দিলাম। আর খেয়াল রাখলাম যাতে আর বাহিরে যেতে না পারে।
একদিন পরে আবার বিড়ালের ঝগড়ার শব্দ শুনে দেখি এবার ভুতু এবার ঐ বিড়ালের উপর আক্রমণ করছে। আমরা অনেকক্ষন চেষ্টার পর নিয়ে আসি। তার চেহারায় একটা তৃপ্তির ছাপ। যেন বলছে আমাকে অসহায় ভেবো না।
এরপর থেকে ভুতু বারান্দার রেলিং কী যে সাহসী ভুমিকা নিয়ে বসে থাকে, ঐ বিড়াল নীচ দিয়ে ঘুরে উপরে আসার সাহস পায় না।
কিন্তু গুফির সঙ্গীরা ঠিকই এসে রাতে খেয়ে যায়। এখন দিনে দুপুরেও আসে। ভুতু সবসময় অল্প খায়, তার পেট ভরে গেলে হাজার চেষ্টা করেও খাওয়ানো যায় না। ভুতুর প্লেটের খাবার দিলে অর্ধেক খায় বাকী অর্ধেক ওরা এসে খেয়ে যায়। ভুতু নিশ্চুপ। যদিও তাদের জন্যও বাহিরে পানি ও খাবার দেওয়া থাকতো তাও তারা ভিতরে এসেই চুরি করে খেয়ে যেতো।
ভুতুর বাসা প্রীতি
এদিকে আমরা বাসা পরিবর্তন করে সরকারী বাসায় উঠার জন্য সব গোছাচ্ছিলাম। মালামাল কিছু শিফট করার পর ভুতু মনে হয় কিছু একটা বুঝতে পারছিল। শুধু ম্যাও ম্যাও করে আর একবার এই রুম ওই রুম করে।
ফাইনাল শিফটের আগের রাতে মালামাল বেশিরভাগ চলে যাওয়ায় আমরা রাতে বাহিরে ছিলাম। ভুতুকে আর আমাদের বাসার সাহায্যকারীকে রেখে গেলাম। পরদিন সকাল বেলায় কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথে ভুতু ভিতর থেকে দীর্ঘ ম্যাও ম্যাও করে ডাকতে থাকলো। ভুতুর কোন অভিযোগ থাকলে এই রকম লম্বা ম্যাও করে।
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোলে নিলাম। তাও ঐ রকম ম্যাও করছে, মনে হচ্ছিল জিজ্ঞেস করছে তাকে রেখে আমরা কোথায় গেলাম। সারা সকাল বাকী মালামাল শিফট করার সময় আমার পিছে পিছে ছিলো। তার মাঝে একটা ভয় কাজ করছিলো আমি তাকে রেখে চলে যাচ্ছি কিনা।
এরপর যখন ভুতুকে কোলে নিয়ে আমি গাড়িতে উঠলাম ভুতু যে কী নিশ্চুপ হয়ে আমার কোলের উপর বসে ছিলো তা বোঝানো যাবে না। সে গাড়িতে চড়া তেমন পছন্দ করে না। ম্যাও ম্যাও করতে থাকে। কিন্তু আজ একটু শব্দও করলো না। খুব শান্ত ছিলো। নতুন বাসায় আসার পর তার সেকি শান্তি। এই বাসাটা ১৩ তলায়। অনেক বড়, অনেক খোলা মেলা। তার এই ঘর থেকে ওই ঘরে বিচরণ শুরু হয়ে গেল।