কত বছর একসাথে চললে আপনি ধরে নিতে পারেন যে আপনাদের সম্পর্কটা স্থায়ী হয়েছে? এটা শুধু দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রে নয় সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন। কেউ হয়ত বলবেন ২০, কেউবা ২৫, কেউবা ৩০ বছর। আসলে কী তাই? তাহলে প্রথিতযশা লেখক হুমায়ন আহমেদের ২৮ বছর পর কেন মনে হলো গুলতেকিন তাকে বুঝে না! গুলতেকিনকে নিয়ে হুমায়নের কত লেখা, বই পাঠকরা পড়েছে আর জেনেছে তাদের ভালোবাসার গল্প। সবকিছু উপেক্ষা করে ভেঙ্গে গেল ২৮ বছরের সংসার। কয়েক যুগের ভাই বোনের সম্পর্ক একটু স্বার্থের টানা পোড়নে ভেঙ্গে যায়, কয়েক দশকের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে পড়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে। তাহলে কিসে সম্পর্কের স্থায়ীত্ব?
ধরুন আপনার খুব কাছের বন্ধু। সমবয়সী, একসাথে বেড়ে উঠা, লেখা পড়া সবকিছু একসাথে করেছেন, চলেছেন দুই তিন যুগ বা তার বেশী। একসময় ভেবেছেন দুজন দুজনের জন্য অনেক কিছু করতে পারবেন। দুজন দুজনকে খুব ভালো করে চিনেন। কেউ কারোর কাছে কিছু লুকান না। কিন্তু একটা সময় পর দেখবেন সেই একসাথে বেড়ে উঠা, অন্তপ্রাণ বন্ধুটা আর আগের মতন নেই!
নিজের প্রয়োজনে সে কিন্তু আস্তে আস্তে পাল্টে যায়। এই পাল্টে যাওয়াটা অনেক কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো আপনি তার মন মতন সব কিছুতে সায় না দিলে ধীরে ধীরে সরে যাবে। আর এরই মধ্যে সেই ঐ কাজের সাপোর্টার খুঁজে বের করে নেয়। যখন আপনার নৈতিকতা তার কাজকে সাপোর্ট করবে না তখনই আপনি দূরে সরতে থাকবেন। তার থেকে আপনি একটুও যদি ভালো থাকেন তাহলে সেটা আরো একটা কারণ হয়ে উঠে। আপনি বুঝতে বুঝতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। আর কষ্ট পেতে থাকবেন কাছের মানুষদের এই পরিবর্তন দেখে।
একটা সময়ে যে মানুষটি সবকিছুতে আপনার পরামর্শ বা সম্মতি নিতে কুন্ঠাবোধ করত না, দেখবেন সময়ের সাথে সে মানুষটি এখন আর আপনাকে জানাতেও চায় না তার কথা। আপনি হয়ত তার সকল সুখ দুঃখের সাথী ছিলেন কিন্তু আপনার যখন এমন কাউকে প্রয়োজন তখন আর কাউকে পাশে পাবেন না।
এই ব্যাপারগুলো ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ঘটে। কোন সম্পর্কের গভীরতাকে সময়কাল দিয়ে গভীরতা মাপা যায় না। আর এর স্থায়ীত্বও এটার উপর নির্ভর করে না। সব কিছুর মত এই ব্যাপারটাও নশ্বর। একজন ব্যক্তি সারাজীবন আপনার জন্য একই স্থানে থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে এই স্থানটাও পরিবর্তিত হয়। যত তাড়াতাড়ি আমরা বিষয়টা মেনে নিতে পারব ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। অন্তত কষ্টটা কম অনুভূত হবে।
কাছের মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে এই ব্যথাটা অনেক গভীর। এই ব্যথাটা পাওয়ার আগেই যদি নিজেকে তৈরি করে নিতে পারেন কষ্ট অনেক কম হয়। অন্যের জন্য বাঁচতে বাঁচতে নিজের জন্য যখন বাঁচার ইচ্ছে জাগে তখন সময় অনেক গড়িয়ে যায়। নিজের জন্য বাঁচতে শেখা উচিত শুরু থেকেই। তাহলে জীবনে কঠিন কষ্ট পাওয়াটা অনেকখানি লাঘব হয়ে যায়।
মনে রাখবেন বাবা-মা ছাড়া কেউই একান্ত আপন নয়। সবাই যার যার তার তার। কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত নয়। কারোর কাছে প্রত্যাশা করা উচিত নয় সে আপনার একশ ভাগ বিশ্বস্ত হবে। সময়ের প্রয়োজনে আর নিজের স্বার্থের জন্য চিরদিন একসাথে থাকা মানুষটাও পাল্টে যেতে পারে। নিজের কাজ গোপন করতে পারে। আপনাকে এড়িয়ে চলতে পারে। বুঝতে পারলেও কিছু করার থাকে না। মনটা শক্ত করে মেনে নিতে হয়। আসলে জগতে মেনে নেওয়াতেই সকল সুখ। আর যদি এর ব্যতিক্রম আপনার জীবনে ঘটে থাকে তাহলে জেনে রাখুন আপনি ভীষণ ভাগ্যবান একজন মানুষ।