ভুতুকে নিউটার করানো
আমার বাসার নিচের তলায় তিনটা বিড়াল। আমার প্রতিবেশির ছোট ছেলেটা প্রায় এসে ভুতুকে নিয়ে যায়। আমি বাসা পাল্টানোর ঝামেলায় ভুতুকে গোসল করাতে পারছিলাম না। ঐ বাসার ভাবি তাকে গোসলও করিয়ে দিতো। ভুতু ওই বাসায় যেয়ে অন্য বিড়ালের সাথে খেলতোনা। চুপচাপ বসে থাকতো।
একদিন ভাবী ফোন করে জানালো ভাবী আমার একটা বিড়ালের হিট এসেছে, ভুতুকে একটু দিবেন?
আমি ভুতুকে পাঠালাম। ভাবী পরেরদিন ও নিলো। পরের দিন আমাকে ফোন দিয়ে ভাবী জানালো, ভাবী ভুতু তো আসলেই ভুতু। এটা কোনই কাজের ছেলে বিড়াল না। আমার বিড়াল তার কাছে গেলেই ভুতু পালিয়ে যায়। সে দূর দূরে গিয়ে বসে থাকে। একটা বলদা বিড়াল!
ভুতুর বেশিদিন আর সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়নি, কারণ উনারা একমাস পরই পোস্টিং হয়ে বাসা ছেড়ে দিয়েছিলো।
এখন আমাদের ভুতুর যন্ত্রণা শুরু হলো। ভুতুর হিট আসলে ভুতু শুধু উলটা পালটা জায়গায় হিস্যু করে। তাই ঠিক করলাম তাকে নিউটার করিয়ে দেব। কিন্তু আমার বাসায় বাচ্চাদের বাবার তাতে খুব আপত্তি। তবুও আমি সিদ্ধান্ত নিলাম প্রতিমাসে তার কষ্টের চাইতে এটাই ভালো হবে।
আমি নিউটার করিয়ে আনলাম। সারাদিন, সারারাত তার খেয়াল রাখলাম। আলহামদুলিল্লাহ সে খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠলো।
সবচেয়ে মজার কথা হলো ভুতুর একটিভনেস বেড়ে গেলো। সে প্রচুর খেলে, কম ঘুমায়। আর যেখানে সেখানে হিস্যু করাও বন্ধও হয়ে গেলো। ভুতুর স্বাস্থ্য ভালো হয়ে গেলো। তার অসুস্থতার হারও কমে গেলো।
দয়াল বাবা ভুতু
২০১৯ এর কথা, আমি খুব অসুস্থ হয়ে একরাত হাসপাতালে ছিলাম। পরেরদিন বাসায় এলেও সারাদিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম। ভুতু সারাদিন আমার রুমে খাটের পাশে বসে ছিলো। ছোট ছোট করে ম্যাও করে আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার ভাগ্নে এসে দেখে ভুতুর চোখে পানি।
নামাজে একটু লম্বা সিজদা দিলেই ভুতুর জন্য তাড়াতাড়ি উঠে যেতে হতো। ভুতু আমার নামাজের পাশেই বসে থাকে। সিজদা থেকে উঠতে দেরী হলেই ভুতু ম্যাও ম্যাও শুরু করে দেয়। বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি সিজদা থেকে উঠে যেতে হয়।
একদিন আমি নামাজ শেষ করে ফ্লোরে লম্বা হয়ে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ শুয়ে আছি দেখে ভুতু আমার নাকের আছে এসে নিঃশ্বাস চেক করছে আবার দৌঁড়ে পায়ের কাছে যেয়ে চেটে দেখে। আমি শব্দ করছি না দেখে একটু পর পর ম্যাও ম্যাও করে আমাকে উঠানোর চেষ্টা করছে। আমি তাও উঠছি না দেখে ছোট ছোট ম্যাও ম্যাও করে আমার পাশে বসে আছে। সে ভেবেছিলো আমি মরে গেছি। তাই কাঁদছিলো। এরপর যখন আমি উঠে বসলাম তখন তার ম্যাও করা বন্ধ হলো।
আমি মাঝে মাঝে বাসার বাহিরে এক/দুদিনের জন্য কোথাও গেলে ভুতুর খুব মন খারাপ থাকে। বাসায় ছেলে মেয়েদের রেখে গেলেও ভুতুর ভালো লাগে না। সারাদিন ম্যাও ম্যাও করতে থাকবে। ওদেরকে খুব জ্বালাবে। একটু পর পর তাদের কাছে গিয়ে ম্যাও ম্যাও করে জ্বালাতন করে। অথচ সারাদিন আমার কাছে বাসায় থাকে, আমি যেখানে কাজ করবো তার আশে পাশে থাকে, শুধু মাত্র খাওয়ার জন্যই ডাকবে। আর নয়ত সারাদিন নিজের মত থাকে।
একবার আমি একা বাড়ি গিয়েছিলাম, আমার হাজবেন্ড আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরেছে। কলিং বেল বাজলেই ভুতু দরজার কাছে চলে যায়। দরজা খোলার পর ভুতু বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, একটু পর সে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ভাবছে আমি লিফট থেকে একটু পরে বের হবো। অনেকক্ষণ বসে যখন দেখলো আর কেউ আসছে না তখন মন খারাপ করে বসে রইলো।
বাসায় যখন আমাদের সব সদস্যরা থাকে তখন তার মন খুব ভালো থাকে। একেকজন একেক সময় বাসায় আসে। সবাই আসার পর তার মনের আনন্দ স্পষ্ট বুঝা যায়। সবাইকে পাওয়ার পর সে নিশ্চিন্ত তার পরিবার তার সাথে আছে। ঘরের ঠিক মাঝখানে বসে থাকে যেন সবার রুম তার চোখে পড়ে।
আমার মেয়ের বেশ কয়েকদিন জ্বর ছিলো। ভুতু সে কদিন আমার মেয়ের মাথার কাছে অথবা তার টেবিলের উপর ঘুমায়। ওর রুম থেকেই বের হয় না। অথচ ভুতুকে জোর করেও এক জায়গায় রাখা যায় না। ভুতু খুব স্বাধীনচেতা। নিজের ইচ্ছামতন ঘুরবে। আপনি চাইলেও কোলে বেশি ক্ষণ রাখতে পারবেন না।
মেয়ের জ্বর ভালো হওয়ার পর আমার বাসার সহকারীর ও জ্বর হলো। আমাদের সহকারী তার রুমে ঘুমাচ্ছে, এদিকে ভুতুকে ডেকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মেয়ে অবশেষে খুঁজে পায় ভুতুকে। ভুতু আমাদের সহকারীর বিছানায় তার মাথার পাশে ঘুমাচ্ছে! সেই থেকে আমি ভুতুর নাম দিয়েছি “দয়াল বাবা ভুতু।”