হে নারী
কলমেঃ তামান্না মহুয়া
“পৃথিবীর সম্পদ এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ ধার্মিকা নারী।” আল হাদীস
আমার বাবা আর আমার ছেলের বাবার একই কথা ,” মেয়ে ছাড়া বাড়ি অপরিপূর্ণ।” বাবা যখন এ কথা বলে , তখন আমার খুব আনন্দ হয়। আমি আমার বাবা – মা রাজকন্যা ।আর যখন আমার বর বলে তখন আমি উওর দেই , ঠিক ই বলেছো , এ কারনেই তো আমার বাবার মেয়ে তোমার কুইন।
চিন্তা করলে অবাক লাগে , আমাদের জীবনের ধাপগুলো বেশ পরিবর্তনশীল। একটা মেয়ে তার বাবা মার ঘরে কত আদরে একটু একটু করে বড় হয়। যখন সে কন্যা তখন বাবা মার প্রতি দায়িত্ববান। যখন সে বোন- তখন মায়ের মতো যত্নবান। এরপর একটা সময় নতুন পরিবারে যায়। মানুষগুলো কে এমন ভাবে বুঝার চেষ্টা করে যেন বহুকাল বহুকাল থেকে এই মানুষগুলোর সাথে বসবাস। তরল পদার্থের মতো নিজেকে মানিয়ে নেয়। পাশের মানুষের সাথে রেল লাইনের মতো সমান্তরাল জীবন যাপনের চেষ্টা করে। এরপর শুরু হয় নতুন একটা অধ্যায়। নিজের মাঝেমানুষ ধারন করা। অনুভূতিটা অনেক কষ্টের কিন্তু চমৎকার।
আমার নিজের কথা চিন্তা করলেই অবাক লাগে। ছোট বেলায় একবার আমার হাত কেটেগিয়েছে। নিজে নিজে ব্লেড দিয়ে নখ কাটতে গিয়ে। আমি তো কেঁদে -কেটে অস্থির। আত্নীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, সবাই কে দেখিয়েছি আর বলেছি, আমি তো খুব আহত, কেউ কেউ দেখে খুব আফসোস করতো। কেউ আবার ভ্রু কুচকিয়ে ভিলেন লুক দিয়ে চলে যেত। যারা চলে যেত তাদের কে আবার বলতাম, আমার হাত টা ভালো হোক তোদের হাতটা ও কে*টে* দেব।
এই আমি যখন মা হওয়ার সময় ২১-২২ ঘন্টা লেবার পেইন এ নীল হয়ে যাচ্ছিলাম, আর বলেছি “ আমি সত্যি মরে* যাচ্ছি , আমি আর পারছি না, আমাকে মেরে* ফেলো। এরপর জুনায়েদ যুবরাজ কে যখন আমার কোলে দেওয়া হলো, আমার মনে হয়েছে, প্রথমবার সন্তান কোলে নেওয়ার মতো আনন্দ আর কিচছু হতে পারে না। সেদিন থেকে আমি দায়িত্ববান আনাড়ি মা।
প্রতিটি মেয়েরই সন্তান, সংসার, সমাজ সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে করতে কখন যেন মনে হয়,অনেকটা সময় গড়িয়েছে। এখন একটু নিজেকে সময় দেওয়া দরকার। তখন ইচ্ছে থাকলেও বার্ধক্য উপনীত হওয়ায় শক্তি থাকে না। সময় বদলেছে, মেয়েদের উচিত সব সময় একটু করে নিজেকে সময় দেওয়ার। কেমন করে সময় দেওয়া :
১. যেমন হতে পারে নিজের প্রিয় বন্ধু -বান্ধবীদের নিয়ে কফির আড্ডা সপ্তাহে একদিন।
২. হতে পারে বান্ধবীর সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া, অথবা একা।
৩. পুরোনো কোন বান্ধবীর সাথে মন খুলে পুরোনো দিনের গল্প করা।
৪. হতে পারে কবিতা আবৃত্তি, শখ পূরন, গান গাওয়া, লিখা লিখি, একা একা হাঁটতে যাওয়া।
৫. সম্ভব হলে শর্ট ভেকেশন এ যাওয়া।
৬. একটু একটু সঞ্চয় করে নিজের জন্য শখের কিছু কিনে নিজেকে চমকে দেওয়া।
আমরা মেয়েরা খুব মায়াবতী। কিছু কিছু সময়ের আমাদের মায়া আমাদের নিজেদের মধ্যে রাখা উচিত। কিছু কিছু কাজ আমাদের করা একদমই অনুচিত। যেমন :
১. নতুন পরিচয়ে কাউকেই ১০০% বিশ্বাস করে নিজেকে খোলা বই বানানোর কোন দরকার নেই। নিজেকে জানানোর মধ্যে কোন লাভ নেই, যা আছে ক্ষতি। ক্ষতি* টা হলো – কেউ যদি আপনাকে জেনে যায়, আপনি কি সে কষ্ট পান ,তাহলে সময় যখন খারাপ হয়, আপনার জানানোর বিষয়গুলো দিয়ে আপনাকে আঘাত* করবে।
২. সম্পর্ক যতই গভীর হোক না কেন, সম্পর্কের মাঝে একটা পর্দা রাখুন। সময় খারাপ* হলেও পর্দাটা আপনার নিরাপত্তা চাদর হিসেবে কাজ করবে।
৩. নিজে নিজেকে ভালবাসুন সবার চেয়ে বেশী।
৪. লাইফে সব কিছুর উপর নিজের ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেবেন। সবাই বলে পরিবার প্রথম, আমি বলি ক্যারিয়ার প্রথম। “যদি আপনার ক্যারিয়ার চমৎকার হয় তাহলে আপনার পরিবারও সুন্দর হবে।” এটা আমার বিশ্বাস, আমার নিজস্ব মতামত। মানুষ ভেদে মতামত ভিন্ন হতেই পারে।
৫. কখনও কারো প্রতি খুব বিচারমূলক হবেন না। যার যার জায়গা থেকে সবাই ঠিক। বিচারমূলক মানুষদের থেকে দূরে থাকুন, নিজেকে দূরে রাখুন। সত্যি বলছি ভালো থাকবেন।
৬. দয়া করে নিজের আত্নমর্যাদা থেকে কোন কিছুকে বেশী প্রাধান্য দেবেন না। তা সে যতই প্রিয় হোক। নিজে নিজেকে সম্মান করে সম্মানিত রাখলে , অন্যরা ও রাখতে বাধ্য। তবে আত্নমর্যাদা আর অহংকারকে মিলিয়ে ফেলবেন না। অহংকারের চেয়ে সম্পর্ক অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অহংকারকে কবর দিয়ে সম্পর্ক ঠিক রাখবেন, কিন্তু আত্নমর্যাদাকে বিসর্জন দিয়ে না।
৭. কখনও ই নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করুন। দেখবেন, নিজের মাঝে “পরোয়া করি না” একটা ভাব চলে আসছে। অবশ্যই এটা পজেটিভ ভাবে ব্যবহার করবেন।
৮. অশান্তিময় মানুষ, পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। এমন কিছু করবেন যা আপনাকে শান্তি দেয় , যেমন দান করা, কারো উপকার করা, প্রার্থনা করা।
৯. কোন প্রকার প্রতিদান ছাড়া সবাই কে ভালবাসুন, এটা সুন্নত।
১০. নিজের সাথে নিজে কথা বলুন প্রতিদিন, নিজেকে বলুন : “তুমিই এটা করতে পারো, তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ।”
যারা এতোক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে আমার লিখা পড়েছেন সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা, ও আন্তরিক ধন্যবাদ। লিখার ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখলে খুশী হবো । সবাই কে নারী দিবসের শুভেচ্ছা , নারীরা ভালো থাকুক।