নিজের জন্য বাঁচতে শিখি
অন্যের জন্য বাঁচতে বাঁচতে, নিজের জন্য যখন বাঁচার ইচ্ছা জাগে তখন অনেকটা সময় গড়িয়ে যায়। নিজের জন্য বাঁচতে শিখি- জীবনে কী তা বোঝার শুরু থেকেই। তাহলে জীবনে হঠাৎ করে কঠিন কষ্ট পাওয়াটা অনেকখানি লাঘব হয়ে যায়।
আপনি যদি আপনাকে নিজের জন্য তৈরি করতে পারেন, তাহলে কে কী বললো আর কে কী চায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আপনার জন্য কে কী করল আর আপনি কার জন্য জন্য কী করলেন তা মাথায় আসবে না।
প্রথম থেকেই যদি ভাবেন, আমি কারোর জন্য কিছু করলাম মানে আমার নিজের জন্য করেছি। প্রত্যাশা ছাড়া যদি কারোর জন্য কিছু করার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে কোন কষ্ট পাবেন না। এই একটা ব্যাপার আপনার জীবনে অনেক স্বস্তি এনে দিবে।
মনে রাখবেন কেউই একান্ত আপন নয়। না স্বামী, না ছেলে, না মেয়ে, না ভাই, না বোন, না বন্ধু, না আত্নীয় স্বজন। সবাই যার যার-তার তার। জীবনে একমাত্র একান্ত আপন হতে পারে ‘মা’। মায়ের দশ বারোটা সন্তান থাকলেও প্রত্যেকের জন্য তার সময় থাকে। কোন সন্তান যদি তার মায়ের কাছে সুখ দুঃখের কথা বলতে চায়, মা তা মন দিয়ে, সময় দিয়ে শুনে। আবার তার জন্য দোয়া করতে থাকে।
সন্তানের জন্য মায়ের সময় অফুরন্ত। সংসারে আর কেউ কিন্তু আপনাকে এত অফুরন্ত সময় দিবে না। দুঃখের বিষয় অনেকের আবার সেই রকম মায়ের ভাগ্য নেই। অনেকের মা হয়ত বেঁচে আছেন কিন্তু তাঁর মা সেই একান্তভাবে মনের কথা বলা মায়ের ভুমিকা পালনে অক্ষম।
অনেক মা আছেন যার কাছে সন্তানরা তাদের মনের কথা বলতে পারেন না। তারা তখন অন্য কাউকে খুঁজে বেড়ায় নিজের কথাগুলো বলার জন্য, উপদেশ নেওয়ার জন্য, একটু সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য।
যেসব সন্তানেরা সব কিছুর জন্য মায়ের কাছে ছুটে যায়, প্রতিটা ক্ষণে মায়ের কথাই আগে মনে করে, মায়ের কাছে আশ্রয় চায়, মায়ের কাছে পরামর্শ চায়, উপদেশ চায়, সান্ত্বনা চায় সেই রকম মা যাদের রয়েছে তারা সন্তান হিসেবে সত্যি অনেক ভাগ্যবান।
কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত নয়। কারোর কাছে প্রত্যাশা করা উচিত নয় সে আপনার একশ ভাগ বিশ্বস্ত হবে। সময়ের প্রয়োজন আর নিজের স্বার্থের জন্য চিরদিন একসাথে থাকা মানুষটাও পাল্টে যেতে পারে। নিজের অনেক কিছু গোপন করতে পারে। বুঝতে পারলেও কিছু করার থাকে না। মনটা শক্ত করে মেনে নিতে হয়।
সময়ের প্রয়োজনে কিংবা নিজের ব্যক্তিগত জীবনের পরিক্রমায় সবাই বদলাতে থাকে। বদলায় না ‘মা’। নিজের প্রিয় ভাই, বোন, বন্ধু, সন্তান, সকলেই তার নিজস্ব জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুধু মায়ের জগতে সন্তানরাই তার আপন।
সবাই দূরে সরে গেলেও মা কখনো দূরে সরে যায় না। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। চিরন্তন সত্যি হলো এই মা আমাদের সবার জীবনে খুব বেশীদিন থাকে না। দেখা যায় এই বড় ঠিকানাটা অল্প বয়েসেই অনেকেই হারিয়ে ফেলেন। এরপর খুঁজে ফিরেন নতুন কাউকে, নতুন কোন আস্থার জায়গা।
কিন্তু আপনি যদি নিজেই নিজের জন্য নিজেকে তৈরি করে নেন, নিজের জন্য বেঁচে থাকার উপায়গুলো জেনে নেন তাহলে আস্থার জায়গাটা আর খুঁজে ফিরতে হবে না। বারবার আস্থার জায়গা হারানো আর মন ভাঙ্গার কষ্টে পড়তে হবে না।
নিজেকে তৈরি করুন নিজের জন্য। অন্যের জন্য করবেন কিন্তু বাঁচবেন নিজের জন্য। এটা যত তাআতাড়ি বুঝবেন তত তাড়াতাড়ি নিজেকে তৈরি করতে পারবেন। দেখবেন সব কিছু কত সহজ। অনেকের কাছে যেটা অসম্ভব সেটা আপনার কাছে খুব স্বাভাবিক বিষয় মনে হবে। অনেকের কাছে যেটা ভীষণ কষ্টের আপনার কাছে তা কিছুই নয়।
চলুন নিজের জন্য বাঁচতে শিখি আর দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন গড়ি।