আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ ২৫ । পুলিশি অভিজ্ঞতা

পেনসেলভেনিয়া স্টেট এর ফিলাডেলফিয়ায় পরিবারসহ ভিজিট ছিলো। তিনদিনের ট্যুরে উল্লেখ্যযোগ্য জায়গাগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ হবে। এই ট্যুরগুলো আমরা খুব উপভোগ করি। একসাথে অনেক অজানা বিষয় জানা যায়। আমেরিকায় এই কোর্সে আসার ফলে এক বছরে অনেকগুলো জায়গায় পরিদর্শন করা গেছে। যেটা অনেক অধিবাসীদের পক্ষে সহজ হয় না। যেমনি আমাদের দেশের সব জায়গায়ও আমাদের পরিদর্শনের সুযোগ হয়ে উঠে না।

২৭শে মে’২০১০ আমাদের ফিলাডেলফিয়ায় ভিজিট। তিনদিনের একটা ট্যুর তাই কিছু কেনাকাটা করার জন্য আগেরদিন গাড়ি নিয়ে বের হই। বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের ড্রাইভ। আমার স্বামী ড্রাইভ করছিল। আমেরিকায় গাড়ি চালানোর কিছু নিয়মের একটি হলো  ডানদিকে মোড় নেওয়ার জন্য কোন সিগনালের প্রয়োজন হয় না। বামদিক থেকে আসা গাড়িকে আগে যেতে দিতে হয়। 

ডানদিকে মোড় নেওয়ার জন্য রাস্তার মাথায় এসে দাঁড়িয়েছি। তবুও সে একটু গতি কমালো এবং অন্য তিনদিক থেকে কোন গাড়ি আসছিল কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছিল। সে দেখল কোনদিক থেকে গাড়ি নেই। হঠাৎ করে একটা সিভিল গাড়ি বামদিক থেকে সিগনাল দিল। আমরা তাকে সাইড দেওয়ার জন্য দাঁড়ালাম। গাড়িটি যাচ্ছে না দেখে আমার স্বামী তাকে হাত দিয়ে ইশারা করলো যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে না গিয়ে এবার তার গাড়ির ফ্ল্যাশ লাইট অন করে দিল। বুঝলাম এটা পুলিশের গাড়ি ছিল। আমরা সাইড করলাম। পুলিশ এলো ড্রাইভিং লাইসেন্স চাইল, দেওয়া হলো। আমরা বুঝতে পারছিলাম না আমাদের দোষটা কোথায়? প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ অফিসার আমার স্বামীকে ডেকে বলল আমাদের ২ টা অপরাধ। এক: লাইসেন্স Invalid এবং দুই: আমরা নাকি তাকে সাইড দেই নি। এই দুটো কেসই আমাদেরকে কোর্টে গিয়ে মোকাবিলা করতে হবে এবং সেটা জুলাইয়ের ২৪ তারিখ।

আমেরিকার স্টেট’ল অনুযায়ী মিলিটারী আইডি কার্ডধারী বিদেশীরা তাদের নিজ দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে এবং এই কথাটা পুলিশ কমিশনার ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে একটা ভিজিটে বলেছেন। আমার বর পুলিশ অফিসারটিকে এই কথাটা বোঝাতে ব্যর্থ হলো। তাকে আরো বললাম আমাদের ফ্লাইট ২৪ শে জুন আমরা কিভাবে ২৪ শে জুলাই কোর্টে যাব? সে জানাল তার কিছু করার নাই। এমনকি আমাদেরকে গাড়িটা পার্ক করে চলে যেতে বলেছে। আমরা বললাম আমার গাড়ি এখানে থাকলে কে নিয়ে যাবে? পুলিশ অফিসারটি বলল, ভার্জিনিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে এমন কাউকে এনে গাড়ি নিতে পারব। আমাদেরকে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি রাস্তায় পার্ক করিয়ে পুলিশ চলে গেল। পুলিশ অফিসারের আচরণ খুব রূঢ় ছিলো।

আমরা হেঁটে বাসায় ফিরলাম। সেখানে গিয়ে  ভার্জিনিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে এমন বন্ধু খুঁজে বের করলাম। আমাদের সাথে কোর্স করতে এসেছে এমন অনেকেই ঐ বিল্ডিং এ থাকত। তাদের মধ্যে একজনকে নিয়ে রাতে এসে গাড়ি নিয়ে গেলাম।

আমেরিকায় পুলিশের এত ক্ষমতা যে তাদের কাজের সমালোচনা বা কোন কথা বলার কোন অধিকার কারোর নেই। প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়কার আলোচিত একটা ঘটনা-কোন এক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তাঁর বাসার চাবি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি তার বাসা ঢুকার জন্য দরজার তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করছিলেন। পাশের বাসার লোক না বুঝেই পুলিশ কল করলেন। পুলিশ আসল এবং উনিই যে বাসার মালিক তা তারা কোনমতেই বিশ্বাস না করে তাকে এরেষ্ট করে নিয়ে গেল। পরে অনেক ঝামেলার পর তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এই ঘটনাটা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। প্রেসিডেন্ট ওবামা এই ঘটনার জন্য নিন্দা জানালেন এবং বলেছিলেন, “পুলিশের উচিত ছিল প্রফেসরের কথা বিশ্বাস করা।“ পুলিশ কমিশনার প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যে খুব মাইন্ড করলেন এবং বললেন “প্রেসিডেন্ট যদি এই রকম মন্তব্য করেন এবং আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেন তাহলে আমাদের কাজ করা সমস্যা হয়ে যাবে।“ শেষে ওবামা দুপক্ষকে ডেকে সমঝোতা করতে হয়েছে।

এই পুলিশ অফিসারের আচরণে আমাদের খুবই খারাপ লেগেছিল। দুটো কেসই সাজানো এবং তার মনগড়া। বিষয়টা অনেকের কাছে তেমন জটিল না হলেও এই পুলিশি অভিজ্ঞতা আমাদের কছে বিব্রতকর ছিল। বেড়ানোটা স্বস্তিকর হবে না ভেবে আমরা ট্যুর বাতিল করলাম।

Leave a Comment