আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ ১৯ । প্রেসিডেন্ট হাউজ

প্রেসিডেন্ট মেডিসন ও টমাস জেফারসনের বাড়ি পরিদর্শন 

জানুয়ারিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন এবং জেমস মেডিসনের বাড়িতে পরিদর্শন ছিলো। দুটো প্রেসিডেন্ট হাউজ ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে অবস্থিত। খুব সুন্দরভাবে তারা তাদের স্মৃতিগুলোকে সংরক্ষণ করছে।

প্রথমদিন গিয়েছিলাম আমেরিকার ৪র্থ  প্রেসিডেন্ট  জেমস মেডিসনের বাড়িতে। মেডিসন ১৮০৯ থকে ১৮১৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উনাকে সংবিধানের জনক বলা হয়। 

জেমস মেডিসনের মন্টপিলিয়ার বাড়িটি অরেঞ্জ কাউন্টিতে অবস্থিত। পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত ২৬৫০ একরের  বাড়িটিতে অনেক ঐতিহাসিক জিনিস দেখলাম। উনার বাড়িতে দেখলাম নিজস্ব আবিষ্কৃত কপিং মেশিন। এই মেশিন দেখে খুব ভালো লাগল । সেই আবিষ্কৃত মেশিনের একপাশে মেডিসন কলম দিয়ে লিখেন, একটু দূরে অন্যপাশে আরেকটা কলম বাঁধা থাকে। সেই কলম দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আরেক কপি লেখা হয়ে যায়।

বাড়িটি অনেক হাত বদল হয়ে শেষে ১৯৮৪ সালে সরকার কিনে নেয় এবং ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত করা হয়। বর্তমানে এটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে খুব জনপ্রিয়।  

আমেরিকার উল্লেখযোগ্য প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ৩য় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন অন্যতম। তিনি ১৮০১ থেকে ১৮০৯ পর্যন্ত দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

জেফারসনের ৫০০০ একরের বিশাল বাড়িটি যার নাম মন্টিসেলো, ভার্জিনিয়ার এলবারেমারেল কাউন্টিতে অবস্থিত। এই বাড়ি উনি নিজে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করেছিলেন এবং নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। এই বাড়িটি তৈরিতে অনেক বছর সময় লেগেছে। তার বাড়ি তৈরির ব্যাপারটা সবার নজর কেড়েছিল। 

জেফারসন দাসপ্রথার বিরোধী থাকলেও উনার ছিলেন ৬০০ দাস। যদিও এই সংখ্যক দাস উত্তরাধিকার সূত্রে এবং শ্বশুরের কাছে থেকে উপহারস্বরূপ পেয়েছিলেন। তবে তিনি দাসদের প্রতি সদয় ছিলেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।  তাঁর নিজস্ব সংগ্রহে প্রচুর বই ছিলো। ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধে লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পুড়ে গিয়েছিলো। ১৮১৫ সালে জেফারসন তাঁর নিজস্ব সংগ্রহের ৬৭০০ বই লাইব্রেরির কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেছিল।

কয়েকদিন আগের তুষারপাতের প্রভাব পড়েছিলো এই বাড়ির চারপাশে। আমাদের পরিদর্শনের সময়টাতে এই বাড়ির  চারপাশ বরফে ঢাকা ছিল। বরফে ঢাকা বিশাল মাঠে আমাদের ছবি তোলার হিড়িক লেগে গেল। ১৯২৩ সাল থেকে এই বাড়িটি টমাস জেফারসন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন কিনে নিয়েছে। তখন থেকে এটা জনগণের পরিদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ল্যুরে ক্যাভেরান্স

এরপরের দিন গেলাম ল্যুরে ক্যাভেরান্স (Luray Caverns)। এটা একটা গুহা যা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এই গুহা আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৭৮ সালে। 

গুহার ভিতরে পানিগুলো ক্রিস্টাল হয়ে ঝুলে আছে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতগুলো পপকর্ণ হয়ে জমে আছে। কী অপরূপ তার সৌন্দর্য, সুবহানআল্লাহ! গুহার ভিতরে পরিদর্শনের সময় হেডফোনের মাধ্যমে এর ইতিহাস বর্ণিত হতে থাকে। ভিতরে লাইটিং আর গুহার নিজস্ব সৌন্দর্য সব মিলিয়ে এক অনন্য রূপ ধারণ করেছে।

সবচেয়ে গভীর আগ্নেয়গিরি গুহাটি টেক্সাসে। সেই গুহা নাকি আরো অনেক বেশি সুন্দর। আল্লাহর একটা ধ্বংসলীলাও যে কতটা সুন্দর হয় তা না দেখলে বুঝা যায় না। সৃষ্টিকর্তার অপার সৌন্দর্যে আমি ভীষণ অভিভুত হয়েছি। প্রতি বছর ৫ লাখ লোক এই ক্যাভেরান্স পরিদর্শন করে।

আমেরিকায় প্রতিটা পার্ক বা দর্শনীয় স্থান  এবং মার্কেটে প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের জন্য আলাদা সুব্যবস্থা থাকে। ওরা ওদের সিনিয়র সিটিজেনদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এই কারণে অনেকে বৃদ্ধ বয়সে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও ঐ দেশের সিটিজেনশীপ নিয়ে থেকে যায়। কারণ চিকিৎসাসহ সব ধরণের নাগরিক সুবিধা ফ্রিতে পায়। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। 

তবে অনেক ব্যতিক্রম এবং অপ্রীতিকর ঘটনাও আছে। অনেক প্রবাসী নাগরিকরা তাদের বয়স্ক বাবা মাকে ভাতা পাবার আশায় দেশ থেকে এনে নিজের কাছে রাখেন। কিন্তু কোন কারণে উনারা ভাতা না পেলে সন্তানরা তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেন। নিজেদের উপার্জনে বাবা মাকে খাওয়ানোর সামর্থ্য নাকি তাদের থাকে না! উপরন্তু আনার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে তা নিয়ে আফসোস করেন।  এই ধরণের অমানবিক ঘটনাও ঘটে থাকে। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বাবা মা রাস্তায় নেমে পড়েন কাজ খোঁজার জন্য। উনাদের আর ফেরারও পথ খোলা থাকে না।

Leave a Comment