আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ ২৪ । আমেরিকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা

সুদমুক্ত হিসাব ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা

আমেরিকায় যাওয়ার পর নির্ধারিত কাজগুলোর আরেকটি ছিলো ব্যাংক একাউন্ট খোলা। ওখানে লেনদেন সব ইউনিভার্সিটির নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে। তাই যাওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়ে গেল।

যাওয়ার সময় আমরা কিছু টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম।  ভাবলাম ঐ টাকাগুলো ব্যাংকে যে কোন ধরণের স্কীম যেমন এফডিআর বা অন্য কোন স্কীমে স্বল্প মেয়াদে রেখে দিব। ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারলাম এই দেশের ব্যাংকগুলোতে কোন স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদী কোন ধরণের কোন স্কীম নেই। এমনকি এখানে সঞ্চয় একাউন্ট থেকেও বছর শেষে কোন রকমের কোন সুদ বা লভ্যাংশ প্রদান করা হয় না। সুদমুক্ত একাউন্ট!

আমরা একটু অবাকই হলাম। আমাদের ধারণা ছিলো এই দেশে হয়ত আরো ভালো স্কীম থাকবে। আমাদের দেশের স্কীমগুলোতে যখন সরকার এর লভ্যাংশ বা সুদ কমায় আমরা হৈ চৈ শুরু করে দেই। অথচ যদি এই দেওয়ার নিয়মটাই না থাকত তাহলে কী করতাম সেটা কেউ ভাবি না।

বাংলাদেশ মুসলমান প্রধান দেশ। সুদ আমাদের ধর্মে হারাম। অথচ আমাদের দেশে এর কোন বিকল্প নেই। আমরা একে কখনও লভ্যাংশ বা মুনাফা নামে দেখিয়ে থাকি। মূলত সবই এক ব্যাপার। আমরা কোন ব্যাংকে বেশী অফার করে তার সন্ধান করি। 

একটু অবাক হলাম ভেবে এই দেশে ধর্মীয় অনুশাসন নেই তাও এমন একটা নিয়ম চালু আছে। আমি ঠিক জানিনা আমেরিকায় কেন জমানো বা মেয়াদী টাকার উপর কোনরূপ সুদ, মুনাফা বা লভ্যাংশ দেয় না। কারণ যাই হোক সবাই তা মেনে নিচ্ছে এবং এই নিয়ে তাদের মধ্যে কোন দ্বিধাও নেই। যে কোন দেশে সরকারীভাবে নিয়ম একবার চালু হলে তা মেনে নিতে জনগণ বাধ্য। তবে ব্যাংক থেকে যে লোন দেওয়া হয় তা কিন্তু সুদ মুক্ত নয়। আপনার ভালো ক্রেডিটের উপর লোনের মেয়াদ এবং সুদের পরিমাণ নির্ভর করে।

আমাদের দেশে বিশাল সংখ্যক একটা জনগোষ্ঠী সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা দিয়ে মাস চলে। তাদের আয়ের একমাত্র উৎস হলো সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা। সবাই জানে যে এই সুদ হারাম। তাও এখান থেকে সরে আসতে পারেনা।  আমার মনে হয় আমাদের দেশেও এইরকম একটা নিয়ম চালু করা খুবই জরুরী।  রাষ্ট্রীয় নিয়মের ফলে ধর্মীয় অনুশাসন বজায় থাকত। 

আমেরিকায় ব্যাংকিং কার্যক্রম অনলাইনে বেশি সম্পন্ন হয়ে থাকে যা আমি ২০০৯ সালে দেখেছি। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ ব্যাংকে যায় না। বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংকে গেলে একজন ক্লায়েন্টেকে একজন ব্যক্তি সার্ভিস দিয়ে থাকেন। তিনি ক্লায়েন্টের যাবতীয় কার্যক্রম দেখে থাকেন। হোক টাকা জমা বা উঠানো বা অন্য কোন কাজ। তিনি নিজেই ঐ কাজগুলো করে দিয়ে থাকেন। যা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মত। আপনাকে একেক সার্ভিসের জন্য একেক ডেস্কে যেতে হবে না। ক্লায়েন্ট বা কাষ্টমারের তেমন কোন হয়রানির শিকার হতে হয় না। সার্ভিসটা নিয়ে ফেরার পর আপনার কাছ থেকে ওরা ফোনে তাদের আজকের সার্ভিস নিয়ে ফিডব্যাক জানতে চাইবে।

সুদ বা মুনাফা না দিলেও আমেরিকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা সার্ভিস নিয়ে আপনার কোন অনুযোগ থাকবে না।

Leave a Comment