গৃহ প্রবেশ ও নামকরণ
টুইঙ্কেল প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগ থেকেই তার খালার সাথে আমার মেয়ে চুক্তি হলো টুইঙ্কেলের বাচ্চা হলে একটা বাচ্চা আমার মেয়েকে এডপট করতে দিবে। টুইঙ্কেল প্রেগন্যান্ট হলো এবং এই সময়টায় সে খুব অসুস্থ হয়ে গেল। তাই তাদের চিন্তা হলো বাচ্চা পাবে কিনা?
২০১৮ এর জুলাই মাসের খুব সম্ভবত ১৯ তারিখ, আমার মেয়ে দৌঁড়ে এসে জানাল, টুইঙ্কেল ৩ টা বাচ্চা প্রসব করেছে। ২টা দুজন নিয়ে গেছে, আর একটা বাকী আছে যেটা দেবে কিনা দ্বিধায় আছে। অবশেষে নভেম্বর মাসে এক বিকেলে আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বললো, মামণি আমি টুইঙ্কেলের বেবি নিয়ে আসছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম কালার কী? সে উত্তর দিল- কালো। আমি জোরে বলে উঠলাম, “না না কালো নিব না। সবাই বলে অলক্ষী।” মেয়ে বলে, “না এগুলো ঠিক না। ও অনেক কিউট। আর এখন আর ফেরত দিব না। তুমি দেখো ও অনেক কিউট।”
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজল। দরজা খুললাম। দেখি আমার মেয়ের কোলে ব্ল্যাক, ব্রাউন, অ্যাশ কালার মিশ্রিত বড় বড় লোমযুক্ত একটা বিড়াল ছানা। চুপচাপ বসে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম, “ওমা এতো ভুতু। এর নাম কী?” আমার মেয়ে বললো এর নামইতো “ভুতু”।
এই হলো আমাদের ভুতুর গৃহ প্রবেশ আর নামকরণের কাহানী। আমি যাকে কালো বলে রাখতে চাইনি আসলে সে ঠিক কালো ও নয়, আবার বাদামীও নয়। প্রথম দেখায় মায়া কেড়ে নিল। চোখগুলো হলুদ বড় বড়। তাকানোটাই অনেক অসহায়ের মত। আর এখন আমার পিছে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে। আমি ল্যান্ড ফোনে কথা বললে আমার পাশে বসে কথা শুনবে। আমি বাসার বাহিরে একদিনের জন্য কোথাও গেলে মন খারাপ করে বসে থাকে।
আমার বাচ্চারা বলে তাদের চাইতে নাকি আমি এখন ভুতুকে বেশি কেয়ার করি। আসলে ভুতু মানে পোষা প্রাণীরা কেমন করে যেন মায়া তৈরি করে নেয়। তারা পরিবারের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে।
আমি অনেকের কাছে শুনেছি বিড়াল পরিবারের সবার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, আসলেই তাই। আমরা আর কোন বিষয়ে আলোচনা না করলেও দিনে একবার সবাই ঠিকই ভুতুকে নিয়ে আলোচনা করে। ভুতুর দুষ্টুমীর কথা, ওর কাজ কর্ম নিয়ে কথা বলার জন্যও হলেও বাচ্চারা আমার রুমে আসে।
গুফির পরিচিতি
আমাদের বাসায় আগে থেকে আরো একটা দেশি বিড়াল আছে। এটা আমার ছেলের বিড়াল, তাই সে নাম দিয়েছে গুফি। উনি আবার দেখতে খুব সুন্দর। গায়ের রঙ সাদা এবং বাদামী। বয়স যখন ১০-১২ দিন আমাদের বাসায় তখন তার আগমন। উনার সৌন্দর্য দেখে আমি ভেবেছিলাম মেয়ে বিড়াল। পরে দেখি উনি ছেলে। বাসায় তার একক রাজত্ব ছিল। প্রথম এক মাস বাসার বাহিরে যেত না। যেই একটু বড় হলো বাসার বাহিরে যাওয়ার জন্য চিৎকার করত। আমার বাসা ছিল দোতলায়। একটা বারান্দা কাপড় শুকানো সহ প্রয়োজনীয় কাজে বেশি ব্যবহৃত হতো। বারান্দার নেট লাগানো থাকত। নেট খুলে উনি চলে যেতেন নিজের ইচ্ছা মতন। ভাড়া বাসা হওয়ায় ক্যাটপ্রুফ করা হয়নি। আবার ঠিক খাওয়া, ঘুম, আর টয়লেট করার সময় বাসায় এসে হাজির। যেন বাহিরে টয়লেট করা উনার মত পোষা বিড়ালের কাজ নয়। হিস্যু উনি আমাদের টয়লেটের জালিতে গিয়ে করত আর বাকীটা উনার পটিতে করতেন।
কেউ বাসায় এলে উনার খেলা বেড়ে যেত। মেহমানের সামনে এক সোফা থেকে আরেক সোফা, আলমারীর উপরে উনার পারফমেন্স দেখাতে ব্যস্ত হয়ে যেত। যখন গভীর ঘুমের প্রয়োজন তখন সবচেয়ে উচুঁ আলমারীর উপরের উঠে ঘুম দিতেন। আবার কাউকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলেই হলো, টুপ করে তার কোলে উঠে ঘুম। শীতের সময় কম্বলের নীচ থেকে বের করা যেত না।
কোন অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি দিয়ে তাড়িয়ে দিলে আবার কোন ফাঁকে কম্বলের নীচে দু পায়ের মাঝে এসে ঘুমাবে টের পাওয়া যেত না। পা নাড়াতে গেলে তখন টের পাওয়া যেত যে গুফি পায়ের মাঝখানে। ঘরে সবার সাথে তার এই আচরণ চলত।
দিন দিন গুফির রাজত্ব বাড়তেই থাকল। সঙ্গে যোগ হলো বাহিরের অতিথিদের প্রবেশ। একদিন দুপুরে মুরগী বের করে রান্নাঘরে রেখে বাহিরে গিয়েছিলাম। এসে দেখি আমার রান্না ঘরে পাতিল উল্টানো। মুরগী নাই। মুরগী বারান্দায় অর্ধেক খাওয়া পড়ে আছে। বোঝার বাকী ছিল না এগুলো গুফি আর তার দলবলের কাজ। রাতে প্রায়ই তারা বাসায় ঢুকে খাবার খেয়ে যেত। মাঝে মাঝে তাদের জন্য বাহিরে খাবার রেখে দিতাম, সেগুলো তাদের পছন্দ হতো না। তারা ভিতরে এসে হানা দিত। গুফি আবার নিজের খাবারে ভাগ কাউকে দিত না।
একদিন গুফি বাহির থেকে এসে দেখি নড়া চড়া করে না। এক পায়ে কোথায় যেন ব্যাথা পেয়ে এসেছে। চঞ্চল গুফি সারাদিন ঘুমায়। পেটুক গুফি কিছু খায় না। খুব মন খারাপ হলো। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তাকে ঘরোয়া চিকিৎসা দিয়ে তিনদিনের দিন সারিয়ে তুললাম। আবার তার ঘরময় দুষ্টুমি শুরু হলো।