ভুতু ঘরে প্রবেশ করে একটুও ঝামেলা করলো না। সে এমনভাবে ঘরে ঘুরতে লাগলো মনে হলো এটা তার পরিচিত কোন ঘর। ভুতু এক কোনায় বসে আছে আর গুফি এসে তার সামনে রাগীভাবে তাকিয়ে আছে এবং তাকে মারতে চাচ্ছে। ভুতুর কোন বিকার নাই। তাকে লুকিয়ে রাখি। আমাদের খাটের একপাশে গুফি আর একপাশে ভুতুকে রেখে দিলেই হলো। গুফি ঝাঁপিয়ে পড়বে ভুতুর উপর। ভুতু চুপচাপ। তাকে আমরা কোন মতে বাঁচিয়ে আনি। একটু চোখের আড়াল হলেই হলো। গুফি শোধ তুলে নেয়। এভাবে পাঁচ দিন গুফি ভুতুকে আক্রমণ করে চললো।
ভুতুকে আর গুফিকে একসাথে খাবার দিলে গুফি তাড়াতাড়ি তার খাবার শেষ করে ভুতুর খাবারে ঝাঁপিয়ে পড়ত। ভুতু খুব ধীরে ধীরে খেতো। ভুতুর খাবার গুফি খেতে এলে ভুতু কিছুই বলত না। দুজনকে দুরুমে খাবার দিতে হতো।
পাঁচদিন পর থেকে গুফি ভুতুকে বন্ধু ভাবা শুরু করলো। ভুতু নিশ্চুপ থাকা আর খাবারের ভাগে বাঁধা না দেওয়ায় গুফি মনে হয় ভেবেছে একে বন্ধু করাই ভালো হবে।
একদিন সকালে দেখি দুজন পাশাপাশি বসে আছে। ক’দিন পর আমার মেয়ে দেখে গুফি ভুতুর কাঁধে হাত রেখে ঘুরছে।
খুব ভালো তাদের এক মহা মিলমিশ। কিন্তু সমস্যা হলো গুফি ভুতুকে তার কাজকর্মের সঙ্গী বানাচ্ছে। এখন গুফির সাথে ভুতুও সোফায়, আলমারীর উপর লম্প ঝম্প করে। একদিন রাতে দেখা গেল গুফি রান্নাঘরের শেলফে হাঁটছে তার পিছু পিছু ভুতু।
দুজনে সব ধরণের মাছই খেত, শুধু ভুতু ভাতের সাথে মিশিয়ে দিলে ভাত খেত না সেখান থেকে শুধু মাছটা খেত। মাছের মধ্যে লইট্টা উনাদের প্রিয় মাছ। একদিন লইট্টা মাছ সিদ্ধ করে নামিয়ে রেখেছি ঠান্ডা হওয়ার জন্য। গুফি ঘুমাচ্ছিল। আমি ঢাকনা দিয়ে মাছ চুলা থেকে নামিয়ে রেখে ঘরে গিয়েছি। রান্না ঘরে শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখি গুফি ঢাকনা সরিয়ে মাছ প্রায় সব খেয়ে ফেলেছে! ঘুমের মধ্যে সে মাছের গন্ধে উঠে গেছে।
প্রথমবার বাসায় ড্রাই ক্যাটফুড আনলাম। ছোট ছোট বক্স আনলাম। দেখতে চাইলাম তারা এটা পছন্দ করে কিনা। খুলে দেওয়ার সাথে সাথে দুজনে তৃপ্তি ভরে খেল। আমি কৌটাটা আমার টেবিলের উপর রেখে মাত্র আসছি, ফিরে দেখি গুফি এক লাফে টেবিলে উঠে কৌটা কামড় দিয়ে দৌড়! এই হলো গুফি!
গুফির গাড়ি ভীতি
আমাদের বাসা ঢাকায়। আমার হাসবেন্ডের পোস্টিং ছিল খুলনায়। ইদ, বাচ্চাদের ছুটিতে ওখানে বেড়াতে যেতাম। বাসায় এখন দুটো বিড়াল তাদেরকে কারোর কাছে রেখে যাওয়া যাবে না। তাই দুজনকেই গাড়িতে নিয়ে রওয়ানা দিলাম খুলনার উদ্দেশ্যে। গাড়ীতে উঠার পর থেকে গুফির চঞ্চলতা শুরু হলো, ম্যাও ম্যাও করতে থাকলো। গাড়ির সিটের পিছনে, জানালা দিয়ে মনে হয় বের হয়ে যাবে। দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। মনে হচ্ছে গাড়ি থেকে বের হলেই সে বাঁচে। পরে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বাসায় গিয়ে দারোয়ানের কাছে রেখে আসলাম। ভুতু একটু অস্থিরতা করলেও তবুও তাকে নিয়ে যাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু গুফির কাছে হার মানতে হলো।
গুফির প্রস্থান
গুফি সব সময় রাতে আমার ছেলের সাথে বিছানায় তার মাথার কাছে, নাকের কাছে ঘুমাত। আর ভুতু শীতের সময় বিছানার এক কোনায় ঘুমাত। অন্য সময় নীচে যখন যেখানে ইচ্ছা ঘুমাত দুজনকেই আলাদা বিছানা করে বক্স বানিয়ে দিয়েছিলাম কেউই সেখানে ঘুমাত না। ভুতুকে কাছে রাখা যেত না। আর গুফিকে মেরেও সরানো যেত না।
আমার ছেলের এ্যাজমার সমস্যা ছিল। দিন দিন তা বেড়েই চলল। ডাক্তার বলল, বিড়াল একেবারেই রাখা যাবে না। কিন্তু আমার ছেলে কিছুতেই গুফিকে ছাড়বে না। ভুতুকে নিয়ে সমস্যা নাই, কারণ ভুতু কাছে ঘেষে না। সমস্যা হলো গুফিকে নিয়ে।
যাহোক আমাকে একটা কঠিন সিদ্বান্ত নিতে হলো। ছেলের সুস্থতার জন্য গুফিকে বিদায় জানাতে হলো। সে কাহিনী এখানে বলে যাবে না তাহলে আমি সারা জীবনের জন্য আমার ছেলের কাছে ইভিল হয়ে যাব। তবে গুফিকে যেখানে দিয়ে এসেছি সেখানে সে ভালো আছে তা খবর পেয়েছি।