মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট । নিরিবিলি ও নির্মল পরিবেশ

নিত্যদিনের ব্যস্ততায় একদিনের জন্য কোথায় ঘুরে এলে কাজ থেকে যেমন ছুটি মেলে তেমনি কাজে আবার মনোযোগ ও বাড়ে। এই কথাটি সত্যি কিনা তা মিলিয়ে দেখতে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন আপনার কাছের যেকোন জায়গায়। যদি ঢাকায় থাকেন তাহলে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে রয়েছে মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট সহ অনেক রিসোর্ট, তার যেকোন একটিতে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। 

গাজীপুরে বিভিন্ন ধরণের রিসোর্ট রয়েছে। একেবারে নিরিবিলি, কোলাহল মূক্ত পরিবেশে অন্যরকম একটা দিন ও রাত কাটিয়ে এলে মনটা অনেক ফুরফুরে হয়ে উঠে। আপনি প্রকৃতপ্রেমী হলে মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট হতে পারে আপনার প্রশান্তির একটা জায়গা। নির্জন জায়গায় মনের জানলা খুলে দিয়ে প্রকৃতিতে মিশে যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে গাজীপুরের মাটির মায়ায় যাওয়ার জন্য নিজস্ব বাহন নিয়ে যাওয়াটাই ভালো। কারণ রিসোর্টটা অনেক ভিতরে। তাই পাবলিক যানবাহন আশে পাশে পাবেন না। রিসোর্টে গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার গুলশান থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত রিসোর্টে্র দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। যেতে প্রায় ২ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।  

রিসোর্টের সরু গ্রামের ভিতরের পাকা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখবেন ঐ এলাকার বেশির ভাগ বাড়ি মাটির তৈরি। হয়ত এলাকার সাথে মিল রেখে মাটির মায়া রিসোর্টের ঘরগুলো মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এর নামকরণের ক্রা হয়েছে।

রিসোর্টের গেটে নেমপ্লেটটাও মাটি দিয়ে লেখা। গেট থেকে ভিতরে যেতে এক থেকে দেড় মিনিট সময় লাগবে। ঢুকার পথে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে বেশ কিছু হরিণ রয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে এই রিসোর্ট। সিকিউরিটির কাছ থেকে জানলাম এটা প্রায় ৭০ একর এলাকার উপর নির্মিত। রিসোর্টে সামনে রয়েছে গাড়ী রাখার বিশাল জায়গা। সামনে ছোট একটা মাঠ এবং দোলনা সহ বাচ্চাদের জন্য খেলার কিছু আয়োজন।

মাঠের পরে রয়েছে রিসেপশান এবং ডাইনিং। গাড়িটা এখানে রেখেও যেতে পারেন আবার চাইলে রিসেপশনের কাছেও নিয়ে যেতে পারেন। রিসেপশনের পিছনে রয়েছে কটেজগুলো। বর্তমানে মোট ৬টি কটেজ চালু আছে। প্রতিটি দোতলা কটেজে রয়েছে ৪টি করে রুম রয়েছে। প্রতিটি কটেজ মাটি আর কাঠ দিয়ে তৈরি। ভিতরের ডেকোরেশনও একটু ভিন্নতা রয়েছে।

মাটির মায়া
মাটির মায়ার কটেজ

বৃষ্টির শব্দ শুনতে ভালোবাসেন এমন লোকদের জন্য এই কটেজের ছাদ্গুলো  সেভাবে করা হয়েছে। রাতে এই বৃষ্টির শব্দ শুনতে অন্যরকম ভালো লাগে। কটেজগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে বসার জন্য খোলা বারান্দা উপরের কাঁচের ছাদ। পূর্ণিমা রাতটা অনায়েসে এখানে বসে উপভোগ করতে পারেন।

কটেজের বাহিরে রয়েছে লেক ও সুইমিং পুল। সন্ধ্যায় কটেজের হলুদ আলোতে পরিবেশ অন্যরূপ ধারণ করে। ডাইনিংটার পরিবেশও অনেক ভালো। বিকালের স্ন্যাক্স রুমে বা ডাইনিং এ সেরে নিতে পারেন। স্ন্যাক্স আর ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি। রাতের ডিনারটা অর্ডার করে নিতে হবে। ডিনারটা রিসোর্টেই সারতে হবে। আশে পাশে কোথায় কিছু পাবেন না।

সকালে মনোরম আবহ তৈরি হয়। এমন পরিবেশে রিসোর্টের চারপাশ, হরিণদের সাথে কিছুটা সময়, লেকের ধারে হেঁটে বেড়াতে একটুও ক্লান্তি লাগবে না। এমন নির্মল বায়ু আমাদের ঢাকাবাসীদের জন্য যেন সোনার হরিণ। মন ভরে শ্বাস নেওয়া যায়। চারদিকে সবুজ গাছ পালা, তার ফাঁকে ফাঁকে মাটি আর কাঠের ঘরগুলো যেন এই রিসোর্টের নামের স্বার্থকতা এনে দিয়েছে।

সকালের নাস্তা সেরে আস্তে ধীরে ফিরে আসতে পারেন ব্যস্তময় জীবনে। নব উদ্যমে কাজে যোগ দিতে পারেন। ক্লান্তি, অবসাদ একটু হলেও কমবে। কাজে গতি বাড়বে। জীবনের একগুঁয়েমি কাটাতে এক/দুই ব্রেক নেওয়াটা আবশ্যক।

মাটির মায়ায় অনলাইনে বুকিং করে চলে যেতে পারেন আপনার পছন্দমত বছরের যেকোন দিন।  এছাড়াও ২ দিন ১ রাতের জন্য ঢাকার বাহিরে কিশোরগঞ্জ এর নিকলী হাওর দেখে রাত কাটাতে পারেন প্রসিডেন্ট রিসোর্টে। নিকলী হাওরের আসল রূপ দেখতে হলে আগস্ট মাস এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়টা উপযুক্ত সময়। মনকে সতেজ রাখুন আর জীবনকে উদযাপন করুন। 

Leave a Comment