আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ ২৯ । মেঘের বহুরূপ

মেঘের বহুরূপ

আসার সময় প্লেনের রুট আর সিট নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। তাই এবার যাওয়ার সময় এমন পরিস্থিতি এড়াতে টিকিট কাটার সময় নিজেদের পছন্দমত রুট আর সিট নিয়েছি। আল্লাহর দরবারে অশেষ শোকরিয়া জ্ঞাপন করে প্লেনে উঠলাম। আমার আসন পেলাম জানালার পাশে। ভার্জিনিয়ার ডালাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের ফ্লাইট। প্লেন ছাড়ল  সন্ধ্যার একটু আগে গোধুলী বেলায় যাকে আমরা কনে দেখার সময় বলি। গোধুলী বেলায় নাকি মেয়েদের দেখতে অন্যরকম সুন্দর লাগে। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে প্রকৃতিতে যে ভিন্ন আলো ছড়িয়ে যায় সে আলোতে নাকি মেয়েদের অন্যরকম রূপ ফুটে উঠে। আমাদের অজান্তে আমাদের দুজনের দেখা সেই গোধুলী বেলাতেই হয়েছিল।

ওয়াশিংটন ডিসি র উপর দিয়ে প্লেন যেতে যেতে দেখলাম সাজানো ও ছিমছাম শহর। প্রতিটা বাড়ি গুছানো, বাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব। উপর থেকে ওয়াশিংটন ডিসিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে একটা গুছানো ও পরিপাটি শহর ।

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে রাত হয়ে গেল। আমাদের প্লেন মেঘের ভিতর ঢুকে গেল। সবসময় আকাশ আর মেঘ আমরা নিচ থেকে দেখি আজ উপর থেকে দেখছি মেঘকে। ভীষণ সুন্দর দৃশ্য। মেঘ যে এত রূপবতী তা আগে কখনো বুঝিনি। মেঘের বহুরূপে আমি বিমোহিত। আমার ক্লান্তি, দুচোখের ঘুম মেঘের রূপের কাছে হার মানল। আমি কিছুতেই এই সৌন্দর্য অবলোকনের সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইলাম না। কখনো কখনো মেঘকে মনে হচ্ছিল সাদা পাহাড়, কখনো কখনো শুভ্র বাড়ি, কখনো মনে হচ্ছিল সাদা তুলো উড়ে বেড়াচ্ছে। মেঘের ঘর বাড়ি, পাহাড়, মেঘের গাছ একেকবার একেকটা মনে হচ্ছিল। এত সুন্দর যে তা ভাষায় প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। মেঘের বহুরূপ যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণই আমি তা অবলোকন করলাম। সুবহানআল্লাহ।

একটু পর দেখলাম মেঘের একপাশ অন্ধকার আর অন্যপাশে দিগন্ত রেখায় আলো ফুটে উঠেছে। আমার কর্তা বুঝালো কাল অংশটুকু্তে রাত আর দিগন্ত রেখার অংশটুকুতে দিন। একসাথে রাত এবং দিন দেখার সৌভাগ্য হলো। বিমান আবিষ্কার না হলে কি আমাদের এসব দেখার সৌভাগ্য হতো? ধন্যবাদ রাইট ব্রাদার্সকে তাদের এই অনন্য আবিষ্কারের জন্য। কত সহজ করে দিয়েছে আমাদের যাত্রা। কত কিছু দেখার সৌভাগ্য করে দিয়েছে তাদের এই আবিষ্কার।

মেঘের রূপ, রাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন সকাল হলো টের পেলাম না। লিখতে গিয়ে দেখা গেল মাত্র কয়েক লাইনে মেঘের রূপ বর্ণনা করা শেষ। কিন্তু আমার মনে একটা অতৃপ্তি রয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আমিতো মেঘের রূপ বিশ্লেষণ ঠিক মতো করতে পারছি না। আমার কলমের জোর মনের কথার কাছে হার মেনেছে। আজও আমি প্লেনে উঠলে মেঘের রূপ খুঁজে বেড়াই। আমেরিকা থেকে আসার পর অনেকবার প্লেনে ছড়েছি। সবসময় মেঘের রূপ দেখার সুযোগ হয়ে উঠে না। সময়, দিক, স্থান, উচ্চতা এসব কিছুর উপর নির্ভর করে মেঘের রূপ।

রাত শেষে যখন সকাল আমরা তখন জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুটে। উপর থেকে দেশটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ঘন সবুজ বন, হালকা বসতি, সাজানো গুছানো। ফ্রাঙ্কফুট বিমান বন্দরে সকাল ৮ টায় পৌঁছালাম। ৩ ঘন্টা যাত্রা বিরতি ছিলো। জার্মানী থেকে ২য় ট্রানজিট বাহরাইন যাবো, সেখান থেকে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। মনের প্রশান্তি সকল ক্লান্তিকে ছাপিয়ে গেল।

Leave a Comment