আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ-৬ । স্কুলে ভর্তি 

বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি 

আগস্টের ২য় সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তির সব রকম আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। আমি আমার দেশের মতই প্রথমে ভেবেছিলাম ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করাবো, না জানি সেটা বাসা থেকে কতদূর হবে? পরে জেনেছি এখানকার নিয়ম হচ্ছে, যে এলাকায় আপনি থাকবেন সেই এলাকার স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট স্কুলে ভর্তি করাতে চান তবে আপনাকে আগে ঐ স্কুলের দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাসা নিতে হবে। আমাদেরকে বাসা দেওয়ার সময় ঐ সব বিবেচনা রেখে ভালো স্কুলের কাছাকাছি বাসা দিয়েছে।

স্কুলে ভর্তির নিয়মটা খুবই সহজ। কোন রকমের টেনশন নেই, ভর্তি যুদ্ধে যাবার জন্য মাসের পর মাস কোন প্রস্তুতি নেই। ইনটেক সেন্টারের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। স্কুলের কোনরকম কোন ভর্তি যুদ্ধের আয়োজন নেই। আমাদের জন্য নির্ধারিত দিনে ইনটেক সেন্টারে গেলাম। প্রবাসীদের বাচ্চা স্কুলে পাঠানোর আগে ইনটেক সেন্টারে এসে একটা পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথমে একটা ফর্ম পূরণ করতে হয়। তাতে বাচ্চা এই পর্যন্ত কোন কোন স্কুলে পড়েছে, কত দিন পড়েছে তার বৃত্তান্ত লিখতে হয়েছে। তাতে মনে হলো স্মৃতি পরীক্ষা দিচ্ছি। এসব ছোট খাট তথ্যগুলো জানা থাকলে অনেক কাজে আসে।

ফর্ম জমা দেওয়ার পর বাচ্চাদেরকে টেস্টের জন্য নিয়ে গেল। নেওয়ার সময় ওরা আমাকে জানাল আমার বাচ্চাদেরকে আমি যে যে ক্লাসে দিতে চাই সে ক্লাস গুলো তাদের জন্য উচ্চমানের হয়ে যাবে। তাদের বয়স অনুযায়ী এক ক্লাস বেশি হয়ে যায়। আমি বললাম, ওরা যদি টেস্টে ভালো করে তাহলে আমি তাদেরকে ঐ ক্লাসেই দিতে চাই। 

৩ ঘণ্টা ধরে টেস্ট চলল। আমার ছেলের রেজাল্ট জানাল, ইংলিশ এবং ম্যাথে খুবই ভালো করেছে। তাই আমি যে তাকে স্ট্যান্ডার্ড ফাইভ (Std V) এ দিতে চেয়েছি তা দিতে পারব। ঐ ক্লাসের জন্যই ওরা রেজাল্ট স্কুলে পাঠিয়ে দিবে। ভর্তির জন্য স্কুলে কোন ঝামেলা নাই। অর্থাৎ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন। এখন শুধু নির্দিষ্ট দিনে স্কুলে যেতে হবে।

আমার মেয়ের টেস্ট একটু দেরীতে শুরু হয়েছিল তাই তার শেষ হতেও সময় লাগছিল। ওর টেস্ট যে শিক্ষক নিচ্ছিলেন ওনার ডিউটি টাইম শেষ তাই উনি ডিউটি শিফট করে চলে গেছেন। পরের দিন উনি যখন আসবেন তখন উনি আমার মেয়ের উত্তরপত্র দেখবেন।

আমেরিকাতে কেউ ডিউটি টাইমের পরে কাজ করে না, এটা আমি অনেকবার দেখেছি। কর্মক্ষেত্রে কেউ নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে সময় দেয় না। পরের দিন মেয়ের রেজাল্ট নিলাম। সেও মাশাআল্লাহ ভালো করেছে। তাই তাকেও স্ট্যান্ডার্ড সেভেন (Std VII) এ ভর্তি করাতে আর কোন বাঁধা রইল না।

ইনটেক সেন্টার থেকে জানাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে বাচ্চাদের টিকা গুলো দিতে হবে। টিকা দেওয়ার নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়া শেষ হলে তারপর স্কুলে যেতে হবে।

টিকা দেওয়াসহ সব কার্যক্রম শেষ করে আমার ছেলের স্কুল ‘অকরিজ ইলিমেন্টারী স্কুল” যাকে আমরা প্রাইমারি স্কুল বলি সেখানে গেলাম। ৯ টায় স্কুল খুলবে। প্রথম দিন তাই একটু আগে গেলাম। ৮:৫০ এর দিকে প্রিন্সিপাল এলেন। উনি আমাদেরকে অপেক্ষা করতে দেখে উনার সাথে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন।

আমার ছেলের বয়স এবং ক্লাস শুনে বলল, ওর জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফাইভের ম্যাথ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আমার স্বামী বলল, সে পারবে। তিনি এবার ছেলের ইনটেক সেন্টার থেকে আসা রেজাল্ট দেখল এবং আশ্বস্ত হলেন। এরপর প্রিন্সিপাল আমাদেরকে সাথে নিয়ে পুরো স্কুল ঘুরে দেখাল। ঐ স্কুলে আমার ছেলে পুরো একবছর পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাকে তার ক্লাস টিচার “Master of Math” উপাধি দিয়েছিল।

স্কুল থেকে অভিভাবকদের অফিসিয়ালি ভিজিটের ব্যবস্থা ছিল। একদিন বাচ্চাদের সাথে টিফিন করার সুযোগ ছিল। যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন তাদের খাবার ব্যবস্থা কেমন। স্কুল থেকে যে টিফিন দেওয়া হতো তা খুব স্বাস্থ্যসম্মত ছিলো। ক্লাস টেস্টে ভালো করলে ওদেরকে ‘Honor roll’ দেওয়া হত, তা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রিন্সিপালের সাথে টিফিন করার সুযোগ পেত। এই টেস্ট কখন হতো টের পেতাম না। যখন ওনার রোল এনে দেখাত তখন বুঝতাম এর মাঝে ক্লাস টেস্ট হয়েছে। এতে বাচ্চারা খুবই খুশি হতো। প্রিন্সিপালের সাথে টিফিন করতে পারায় বাচ্চারা অনেক  সন্মানিতবোধ করত।

ক্লাস ফাইভে স্কুলে বিভিন্ন পেশার উচ্চ পদস্থ কাউকে এনে লেকচার দেওয়া হত। তাতে করে বাচ্চারা বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে, তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারত। আর এতে করে সে নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও একটা লক্ষ্য স্থির করতে পারত।

Leave a Comment