স্ট্যাচু অব লিবার্টি
আমেরিকা যে কয়টি প্রতীক দ্বারা পরিচিত ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ তার মধ্যে অন্যতম। এটি নিউইয়র্কের লিবার্টি আইল্যান্ডে অবস্থিত। আমেরিকার ১০০ বছর পূর্তিতে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ফ্রান্স ১৮৮৬ সালের ২৮শে অক্টোবর মূর্তিটি আমেরিকাকে উপহার দেয়। স্ট্যাচু অব লিবার্টি মূল মূর্তিটি ফ্রান্সে তৈরি হয়। বেদীসহ এর মোট উচ্চতা ৩০৫ ফুট, যার মধ্যে ১১১ ফুট উচ্চতা হলো মূর্তিটির হিল থেকে মাথা পর্যন্ত। বেদী নির্মাণ করে আমেরিকা।
মূর্তিটির ডান হাতে মশাল যা কিনা স্বাধীনতার প্রতীক এবং মশালের আলো দ্বারা পৃথিবীকে আলোকিত করছে বোঝাচ্ছে। বাম হাতে বই বা সংবিধান তাতে রোমান ভাষায় আমেরিকার স্বাধীনতার তারিখ ৪ জুলাই ১৭৭৬ (JULY IV MDCCLXXVI) লেখা রয়েছে। মাথায় যে মুকুট তাতে ৭টি রশ্মির মতো রয়েছে। সেই ৭টি রশ্মি দ্বারা ৭ টি মহাদেশ ও ৭টি সমুদ্রকে বোঝানো হয়েছে। পায়ে শিকল রয়েছে যেটা দ্বারা বোঝাচ্ছে শিকল ভেঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ দাসপ্রথা বিলুপ্ত বোঝাচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Statue_of_Liberty
মূর্তিটি তামার তৈরি। তামা বাতাসের সংস্পর্শে এসে এখন তা সবুজ রঙ ধারণ করেছে। মূর্তিটি তৈরি হতে ১০ বছর সময় লেগেছে। এই বিশালাকার মূর্তিটা বসানোর কৃতিত্বটা আসলে বিরাট বিষয়। প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী আসে এইখানে। ২০২২ সালের হিসেব মতে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে ৩.১৪ মিলিয়ন দর্শনার্থী এসেছেন। আমরা গিয়েছিলাম ২০১০ সালে। সেই বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ৩.৮৩ মিলিয়ন।
অনেকে দূর দূরান্ত থেকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে আসে। আমরাও আমাদের দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে এটাকে রাখলাম। জ্যাকসন হাইটস থেকে লিবার্টি আইল্যান্ড অনেক দূরে। জ্যাকসন হাইটস থেকে সাবওয়ে করে রওয়ানা দিলাম। এক ঘণ্টা পর পৌঁছালাম। সেখান থেকে শীপে করে লিবার্টি আইল্যান্ডে যেতে হবে।
সেদিন প্রচন্ড শীত ছিলো। টিকিট কেটে শীপে উঠার জন্য বিশাল লাইন। প্রায় দেড় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর নির্দিষ্ট শীপে করে লিবার্টি আইল্যান্ডে নিয়ে গেল। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। বাহিরে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারিনি। তাই তেমন ভালো ছবি তুলতে পারিনি। তবুও খুব ভালো লাগছিল। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মাথায় যে মুকুট আছে তার চূড়ায় উঠা যায়। সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে হতো। ১১/৯/২০০১ এর ঘটনার পর মুকুটের শীর্ষে উঠা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ এর ৫ জুলাইতে তা আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সি দুই পাশ থেকেই লিবার্টি আইল্যান্ডে যাওয়া আসা করা যায়। আমরা নিউইয়র্ক থেকে উঠেছি আর নেমেছি নিউজার্সিতে। ওখানে আমার এক ছোট ভাই থাকত। তাদের সাথে দেখা করে নিউইয়র্ক এর ম্যানহাটনের দিকে রওয়ানা দিলাম।
নিউইয়র্ক নাকি ৩ তলার শহর। আসলেই তাই, পাশাপাশি তিন স্তরের রাস্তা, তিন স্তরে বাড়ি। অনেক বেশি ব্যস্ত ও জনবহুল। অনেক পুরানো তবে অনেক আগে থেকেই এটা উন্নত। এক খালার বাসায় দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত একটা।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল তাই আমরা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাসায় পৌঁছালাম। বাসায় গিয়ে আবিষ্কার করলাম আমার মেয়ের গলায় ঝুলানো ক্যামেরাটা নাই। দৌঁড়ে আসার সময় কখন পড়ে গেছে টের পায়নি। মেয়ের বাবা, মামা সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করল কিন্তু পেল না। ক্যামেরার চাইতে ছবি গুলোর জন্য মন খারাপ লাগল। কারণ স্মৃতি বলতে এই ছবিগুলোই থাকবে।
আমরা চলে আসার কিছুদিন পর আমার ভাই ফোন করে জানালো, ভাইয়ের এক পরিচিত বন্ধু ক্যামেরাটা পেয়েছে। ক্যামেরা সচল হলো না কিন্তু তার ভিতরে এসডি কার্ডের ছবিগুলো পেয়েছি। এতেই আমরা অনেক খুশি এবং আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেছি।
পরদিন আমার এক খালাতো ভাই এসে উনার বাসায় নিয়ে গেলেন। তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন ম্যানহার্টন দেখাতে। নিউইয়র্কে এসে কেউ সন্ধ্যার ম্যানহার্টনে না গেলে নাকি তার নিউইয়র্ক বেড়ানো পূর্ণ হয় না। এটাকে নিউইয়র্কের হৃদয় বলা হয়।
নিউইয়র্কের হৃদয় দেখতে বের হলাম সন্ধ্যায়। রাস্তার দুপাশে অনেক বড় বড় টিভি, বিলবোর্ড, প্রচুর লাইটিং, মানুষ হাঁটার অনেক জায়গা, এমনিতেই ভালো লাগে। অন্যরকম একটা সৌন্দর্য। একটা উৎসব উৎসব ভাব। মনে হলো, না এলে আসলে মিস করতাম।
খুব ব্যস্ত জায়গা, গাড়ি পার্কিং এর কোন জায়গা নেই। ভাই আমাদের নামিয়ে দিয়ে চক্কর দিচ্ছেন আর আমরা ঘোরাঘুরি করছি, কেনাকাটা করছি। অনেক বাঙ্গালীর দোকান পেলাম। আমাদের ঘুরাঘুরি আর কেনাকাটা শেষ হবার পর ভাইকে ফোন দিলে উনি আমাদের তুলে নিলেন।
রাতে গেলাম ব্রুকলিনে আমার এক বান্ধবীর বাসায়। সেখানে আরো এক বন্ধুর দেখা পেলাম। খুব মজা লাগল, একসাথে এত পরিচিত মুখ দেখে। বিদেশে নিজের কাছের বা পরিচিত কাউকে পেলে অনেক ভালো লাগে। তার বাসার সামনে বড় একটা মসজিদ। মনে হলো আমাদের দেশের কোন বাসায় এসেছি। এটা একটা মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং। এখানে ৪০ টা ফ্ল্যাটের মধ্যে ৯৫ ভাগই নাকি বাংলাদেশি।
তিনদিনে জ্যাকসন হাইটস, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, নিউজার্সি, ম্যানহাটন, ব্রুকলিন এতো জায়গা দেখার সুযোগ হয়েছে। খুব ভালো লাগা এবং আমার স্বামীর মতে জামাই আদর নিয়ে তিনদিনের মহাব্যস্ততা আর ঘোরাঘুরি শেষ করে ৩০ তারিখে বাসে করে বাসায় ফিরলাম।