ভুতু কাহানী- পর্ব ৩ । ভুতুর চিকিৎসা

ভুতু আসার পর থেকেই অসুস্থ ছিল। বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছিল তার। প্রায় বমি করত। ঘাড়ে, গলায় অনেক ঘা হয়ে গিয়েছিল। ভুতুর এক ভাইও শুনেছি মারা গিয়েছে। ভয় হচ্ছিল ভুতুও না মারা যায়। তাকে ডাক্তারের কাছে দুবার নিয়ে ভুতুর চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করলাম। ডাক্তারের কাছে জানতে পারলাম মানুষ আর বিড়ালের ঔষধ একই। শুধু পরিমাণ ঠিক রাখতে হয়।  কয়েকদিন পর আবারোও একই সমস্যা হলে একই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলতাম। নিয়মিত গোসল, পরিচর্যা, গ্রুমিং করানোর ফলে ধীরে ধীরে তার অসুস্থার হার কমতে থাকলো। 

ভুতুর অন্য বাসা অপছন্দ

গুফি চলে যাওয়ার পর থেকে ভুতু তার আগের স্বরূপে ফিরে এসেছে। সে শান্ত, চুপচাপ। আমাদের বাসায় আমার মেয়ের প্রোজেক্টের জন্য ওর অনেক বন্ধুরা আসতো। তাদের মধ্যে অনেকেই বিড়াল ভয় পেতো। ভুতুকে দেখে অনেকের সেই বিড়াল ভীতি কেটে গেছে। যখন তারা কাজ করতো তাদের মাঝে গিয়ে বসে থাকত।

২০১৯ সালে আমরা পরিবারসহ সিঙ্গাপুরে যাবো পাঁচদিনের জন্য। ভুতুকে অন্য কারোর বাসায় রেখে যাবো ভাবলাম। প্রথমে ভুতুর মা টুইঙ্কেলের কাছে দেওয়ার জন্য চিন্তা করলাম। কিন্তু তার মায়ের বাসা থেকে জানালো এখন ভুতুকে রাখা যাবে না। কারণ যদি টুইঙ্কেল আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে তাহলে মুশকিল হয়ে যাবে। আগেরবার টুইঙ্কেল অনেক অসুস্থ হয়েছিল সেজন্য তাদেরকে এবার সাবধান থাকতে হচ্ছে।

অবশেষে ভুতুকে আমাদেরকে এক বন্ধুর বাসায় রেখে গেলাম। উনারা বিড়াল খুব পছন্দ করেন। ভুতুর কিছু ক্যাটফুড দিয়ে গেলাম। এছাড়া ভুতু মাছ, মাংস ও খেতো। আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ভুতুর খবর নিতাম। ভাবী জানাল ভুতু সারাদিন মন খারাপ করে এক কোনায় বসে থাকে। খাবারও তেমন খাচ্ছে না, শুধু একটু ক্যাটফুড খাচ্ছে। 

পাঁচদিন পর যখন আমরা ফিরলাম, আমার ছেলে মেয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি ঐ ভাই ভাবির বাসায় গিয়ে আগে ভুতুকে নিলো। ভুতু নিজের বাসায় ফিরে তার চোখে মুখে আনন্দ ফিরে এলো, খাওয়া দাওয়া সব স্বাভাবিক।

আরেকবার আমরা খুলনা যাওয়ার আগে আমার বোনের বাসায় ভুতুকে রেখে যাবো ঠিক হলো। কারণ ওরাও ভুতুকে খুব পছন্দ করে। ভুতু সেই বাসায় গিয়ে খাটের নিচে এক কোনায় ছুপটি মেরে বসে থাকে, তা দেখে ওরা ভয় পেয়ে যায়। তাই তাকে আবার নিয়ে এসে খুলনায় নিয়ে গেলাম। এইভাবে ভুতু নিজের বাসা ছাড়া আর কোথাও থাকতে চায় না।

ভুতুর প্রেম ও ধরা খাওয়া

আমাদের শান্ত, লক্ষী ভুতুকে একদিন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চারাও ইউনিভার্সিটিতে। কেউ বাসায় নেই।  আমি কোথাও খুঁজে না পেয়ে নিচে নেমে পাশের বাড়ি গুলোতে খুঁজতে গেলাম। আমাদের বাসা তখন মিরপুর ডিওএইচএসে।  পিছনের বাসাটায় কাজ চলছিল। সেখানে গিয়ে ভুতুর বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এমন কোন বিড়াল দেখেছে কিনা?

সেই বাসার কেয়ারটেকার জানালো একটু আগে একটা কালো বিড়াল আর আরেকটা সাদা বিড়াল একসাথে এই বাসায় দেখেছে। কালোটা সাদাটার পিছনে পিছনে ছিল। কিছুক্ষণ আগে দেখেছে কিন্তু এখন জানে না কোথায়?

আমি এরপর রাস্তার অপর পাশের বিল্ডিং এ গিয়ে ভুতুর বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এবং দেখলাম একটা সাদা বিড়াল গ্যারেজের গাড়ির নিচে। আন্দাজ করতে পারছিলাম এটাই মনে হয় সেই বিড়াল যার পিছু পিছু ভুতু ঘুরছে। বাসার কেয়ারটেকার জিজ্ঞেস করলো আপনার বিড়ালের নাম কী? আমি বললাম ওর নাম ভুতু। কেয়ার টেকার আমাকে তার রুমের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, আপনি ওকে ডাকেনতো? আমি ডাক দিলাম-ভুতু, ভুতু। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাও ম্যাও করে জবাব দিল। 

কেয়ার টেকারের রুমে আরো কয়েকজন লোক ছিলো। ওরা বের হয়ে এসে বললো, এতক্ষণ থেকে এই বিড়াল কোন শব্দ করে নাই। আপনার কণ্ঠ শুনেই ম্যাও ম্যাও করা শুরু করেছে। এইটা যে আপনার বিড়াল তা নিশ্চিত। এই বিড়াল আর সাদা আরেকটা বিড়াল এখানে দেখে আমরা এটাকে ধরে রেখেছি আর দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি যেন পালাতে না পারে। আমি ভুতুকে পেয়েই কোলে তুলে নিলাম। আর ভুতুও আমাকে পেয়ে মনে হলো তার জানে পানি ফিরে এসেছে।

আমি বললাম আপনারা ওকে বেঁধে রেখেছেন কেন? ওরা বললো যেন পালাতে না পারে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওদের অন্য উদ্দেশ্য ছিল।

যাহোক ভুতুকে কোলে নিয়ে আমি চলে আসছি আর সাদা বিড়ালটা তখনো গাড়ির নিচে বসে আছে। ভুতু ভয়ে আমাকে আকঁড়ে ধরে আছে।

বাসা আনার পর বারান্দার দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিলাম। বিকেলে থেকে ভুতুর আবার ম্যাও ম্যাও শুরু। বাহিরে যাওয়ার জন্য! তার মানে বুঝলাম সে ঐ সাদা বিড়ালের প্রেমে পড়েছে। ভুতুর কান্ড দেখে আমি অবাক। অবৈধ প্রেম করতে যেয়ে ধরা খেয়েও তার আক্কেল হয়নি! 

পরদিন দেখি ঐ সাদা বিড়াল সঙ্গে আরো ২টা বড় বিড়ালসহ পুরো দলবল আমাদের বাসার সামনে ঘুর ঘুর করছে। কিছুক্ষণ পরে দেখি তারা আমাদের সানসেটের উপর হাঁটাহাঁটি করছে। বুঝতে বাকী রইলনা এরা ভুতুর প্রেমিকার আত্নীয় স্বজন। পাত্র দেখতে এসেছে!

এর কয়েকদিন পর, রাতের বেলায় আমার মেয়ে এবং তার বন্ধুরা মিলে প্রোজেক্টের কাজ করছে। হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখে ভুতু আর দুটো বিড়াল মুখোমুখি বসে আছে। চোখে চোখে কথা বলছে। 

আমাদের প্রেমিক ভুতু।

Leave a Comment