ভুতু কাহানী- পর্ব ৬। ভুতুর বিভিন্ন স্বভাব

ভুতুর বিভিন্ন স্বভাবের মধ্যে খাওয়ার স্বভাবটা আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে। খেতো কম কিন্তু সে অনেক কিছুই খায় না। ভাত, দুধ কখনই  খায় না। মাছের মধ্যে লইট্টা মাছ ছাড়া আর অন্য কোন মাছ খাবে না, মুরগীর মাংসও খুব কমই খেয়েছে। ক্যাট ফুড খায় তাও আবার বিশেষ ব্র্যান্ডের।

২০২০ সালের লকডাউনের আগে আমি বেশ কিছু লইট্টা মাছ কিনে রেখেছিলাম। আমার মেয়েরও লইট্টা মাছ প্রিয়। এখন সেই মাছ বাসায় কেনা হয় বেশি কিন্তু আমার মেয়ের ভাগে জুটে কম। কারণ তা সংরক্ষিত রাখা হয় আমাদের নবাবজাদার জন্য।

এরমধ্যে লইট্টা মাছেরও সিজন শেষ, লকডাউন চলছে। লইট্টা মাছ শেষ, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ভুতু অন্য কোন মাছও খাবে না, মুরগীর মাংস খাবে না, দুধও খাবে না। আমি সিদ্ধ করে তার মুখের সামনে ধরে রাখি সে আমার হাতের উপর লাফ দিয়ে চলে যায় তাও খাবে না।

অনেক কিছু চেষ্টা করি। এরপর মুরগীর কলিজা দেই সেটা দেখি একটু একটু খায়। যে কদিন মাছ ছিলো না সে কদিন কলিজা খেতো তাও মাঝে মাঝে।

এরপর আবার যখন লইট্টা মাছ বাজারে এলো তখন আর কলিজা খায় না। লইট্টা মাছও মর্জি ভালো হলে খাবে না হলে খাবে না।

মাঝে মাঝে ক্যাটফুডও দেই না। কিন্তু সে না খেয়ে থাকবে তবুও তার পছন্দের খাবার না হলে খাবে না। ম্যা ম্যা করবে কিন্তু খাবে না। শুধু ক্যাটফুড ভালো না জেনেও কিছু করার নেই।

ভুতু হলো আমার মেয়ের বিড়াল। আমার মেয়েও আমাকে খাওয়া নিয়ে জ্বালাতন করতো এবং এখনো করে। তার বিড়ালকেও তার মত হতে হবে!

শিকারী ভুতু

ভুতুর আছে প্রচন্ড শিকারের দক্ষতা। পোকা দেখলে গভীর ঘুমও নস্যি। ঘুম প্রিয় ভুতু অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে তার শিকার উড়ন্ত পোকাকে ধরার জন্য। বাসায় তেলাপোকার উৎপাত ভুতুর কারণে কমে গেছে। কোন একটা তেলাপোকা দেখলেই তাকে মারবে না কিন্তু অর্ধ মৃত করে ছাড়বে। তেলাপোকা না নড়লে ভুতু তাকে নাড়িয়ে নাড়িয়ে খেলে।

টিকটিকি দেখলেই হলো তাকে না ধরা পর্যন্ত তার শান্তি নাই। ধরে লেজটা খসে পড়া পর্যন্ত ভুতু তার পিছু ছাড়ে না।

ভীতু ভুতু 

 নতুন বাসায় আসার পর একদিন রাত দশটায় যে ছেলেটি আমাদের বাগান পরিচর্চা করে সে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ম্যাডাম ভুতু কই? আমি বললাম ভুতুতো বাসায়। বলল দেখেনতো, বাসায় আছে কিনা? ভুতুকে ডাকি সে নাই। অথচ কিছুক্ষণ আগেও বাসায় ছিলো। তাছাড়া মাঝে মাঝে তার গভীর ঘুমের দরকার হলে খাটের নিচে গিয়ে ঘুম দেয়। আমি ভাবলাম কোথাও ঘুমাচ্ছে।

পরে সে বললো , আমি আসছি। একটু পর সে ভুতুকে নিয়ে আসলো। বললো ভুতু ছাদে গিয়েছিলো। ছাদে যে কেয়ারটেকার থাকে উনি তাকে ফোন দিয়ে জানালো তোমার স্যারের বাসার বিড়াল কী কালো রঙয়ের? ছেলেটা বললো হ্যা, বললো বিড়াল ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে, মন হয় ভয় পাচ্ছে, আমি কোন রকমে ধরে রেখেছি।

পরে সে গিয়ে ভুতুকে নিয়ে এসেছে।  এরপর অনেকবার ভুতুকে নিয়ে ছাদে গিয়েছি কিন্তু সে ছাদে থাকতে চায় না, শুধু পালাতে চায়।  ভীষণ ভয় পেয়েছে। 

বাসা যেহেতু পুরানো এয়ারপোর্টের কাছে তাই প্রায়ই বিমান মহড়ার প্রচুর শব্দ হয়। বিশেষ করে মিগ যখন আমাদের বাসার খুব কাছ দিয়ে যায় ভুতুকে কোন রকমেই আটকে রাখা যায় না। দৌড়ে বাথরুমের ভিতর পালাবে। ওখানেই ঘুমায়। এত ভীতু।

ভুতু জোরে কোন শব্দ হলেই খুব ভয় পায়। আমার বাসা থেকে আতশ বাজি খুব সুন্দর দেখা যায়। ভুতু আতশ বাজিকে খুব ভয় পায়, দৌঁড়ে খাটের নিচে পালিয়ে যায়। 

Leave a Comment