প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি | বিবর্তন কাল

 আমাদের যাদের জন্ম ৭০ দশকে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পর তারা অনেক ভাগ্যবান। তারা প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও অনেক অনেক বিবর্তনের সাক্ষী। আমরা ভাগ্যবান কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাইনি। যুদ্ধের কঠিন সময়গুলো পার করে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে জন্মলাভ করেছি। আমরা জন্মেই জেনেছি আমরা বাংলাদেশী। আমরা পূর্ব পাকিস্তানী থেকে বাংলাদেশী হইনি। আমরা সরাসরি বাংলাদেশী হিসেবে নিজের পরিচয় নিয়ে এসেছি। সেজন্য গর্বিত।

বিবর্তনের ধারা

আমাদের সময়ে সাদা কালো টেলিভিশন ছিলো। দিনে তিনটায় খুলত আর রাত বারোটায় বন্ধ হতো। সাদা কালো টিভি থেকে রঙ্গিন টিভি, বেলা তিনটা থেকে শুরু হওয়া টিভি থেকে সারা দিনরাত খোলা টিভি। একটা নির্দিষ্ট চ্যানেল থেকে শ’ শ’ চ্যানেল। প্রযুক্তির বিবর্তনের এই ধারাবাহিকতার সাক্ষী আমাদের প্রজন্ম।

আমরা টেলিফোন দেখেছি ল্যান্ড টেলিফোন। তাও সেটা সবার বাসায় ছিলো না। হাতে গোনা কয়েকজনের বাসায় বা বাড়ীতে সেই ফোন দেখতে পাওয়া যেত। প্যাডেল দিয়ে ঘুরানো টেলিফোন। আমার বড় আপা ঢাকায় থাকত। নোয়াখালী থেকে এনডব্লিউডি কল করার জন্য আমি, আমার বোন, এবং আম্মা মিলে ঘণ্টা দুই-তিনেক চেষ্টার পর সেই কাঙ্ক্ষিত ফোনে আপাকে পেতাম। নম্বর ঘুরাতে ঘুরাতে তিন জনের আঙ্গুল ব্যথা হয়ে যেত।

সেই প্যাডেল ফোন থেকে থেকে কর্ডলেস ফোন। তারওয়ালা প্যাডেল ফোন থেকে তার বিহীন, নিজের সাথে বহন যোগ্য, নম্বর ঘুরানো ছাড়া মোবাইল ফোন। নোয়াখালী থেকে ঢাকা নয়, সারা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে নিমিষেই কথা বলার জন্য মোবাইল। প্রযুক্তির এই উন্নতি ও অনন্য ঘটনার সাক্ষী আমাদের প্রজন্মসহ আমাদের উত্তরসূরী ও পূর্বসূরী সবাই।

আমরা সাক্ষী হাতের লেখা চিঠির পরিবর্তে ইমেইল এবং খুদে বার্তার। একদিনের ভিতর চিঠি যাতে পায় সেজন্য কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করাও দেখলাম। বিদেশ থেকে পাঠানো চিঠি প্রায় হারিয়ে যেতো বা বলা যেতে পারে চুরি হয়ে যেত, সেখানে বিদেশ থেকে পরিবারের কাছে পাঠানো চেক থাকবে এই আশায়। তারও বিবর্তন দেখলাম অনলাইন ট্রান্সফার। এবং আরো অনেক সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে দিনে দিনেই টাকা বিদেশ থেকে দেশে পাঠানোর পদ্ধতিগুলো আবিষ্কারের মাধ্যমে।

বোবাটকি, বায়োস্কোপ, সাদা কালো সিনেমা থেকে ভিসিআর, ডিভিডি, ভিসিডি, এমপি থ্রি, এই রকম কত কিছু এলো-গেল। সব কিছুর জায়গা দখল করে নিল ইন্টারনেট আর মোবাইল।

সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন নিয়ে আসলো মনে হয় মোবাইল, আর ইন্টারনেট। দুনিয়াটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এলো।

কম্পিউটার ৬০ দশকে আবিষ্কার হলেও এর গতি নিয়ে এসেছে ইন্টারনেট। একটা সময় মাঝ বয়সীরা কম্পিউটারে কাজ করায় অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও ধীরে ধীরে এর যে কোন বিকল্প নেই তা বুঝতে পেরেছে। আজ সবাই জানে ইন্টারনেট আর কম্পিউটার ছাড়া অনেক কিছুই অচল।

যারা বিংশ শতাব্দীর তারা তেমন কিছু বুঝবে না। তাদের কাছেতো ১০ মিনিট ইন্টারনেট না থাকলে সব কিছু অন্ধকার মনে হয়। তারা কোথাও গেলে আগে জেনে নেয় সেখানে ইন্টারনেট আছে কিনা। আমরাও আজ তেমনি অঅভ্যস্ত হয়ে গেছি। অথচ আমাদের সময় আমরা ইন্টারনেট, টিভি, মোবাইল ছাড়াই সময় পার করেছি, ছুটি কাটিয়েছি। আমরা কালের সাক্ষী।

সময়ের সাথে এগুতে হলে আমাদেরকে প্রযুক্তির সাথেই চলতে হবে। নিজেকে যত তাড়াতাড়ি এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারব ততই মঙ্গল। এই প্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোন প্রান্তের কাজ করতে পারছি। সত্যি অভাবনীয় এবং আমার কাছে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় এতো এতো প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি দেখার এবং ভোগ করার সৌভাগ্য লাভ করার জন্য।

Leave a Comment