গত পর্বে জেনেছি ফ্রিল্যান্সাররা যেখানে কাজ করেন বা কাজ পেয়ে থাকেন আর যেখানে ক্লায়েন্টরা কাজ দিয়ে থাকেন তাকে মার্কেটপ্লেস বলে। এবার জানবো ফ্রিল্যান্সারদের টাকা উত্তোলনের উপায়।
কাজ পাওয়ার বা কাজের এপ্লাই করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদেরকে এই সব মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। এই প্রোফাইলের সাথে সাথে প্রত্যেকের জন্য একটা ফিন্যান্সিয়াল একাউন্টও তৈরি হয়। বায়ার বা ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার প্রত্যেকেরই এই রকম ফিন্যান্সিয়াল একাউন্ট থাকে।
ফ্রিল্যান্সার যদি ফিক্সড প্রাইসের কাজ করে থাকেন তাহলে বায়ারকে কাজ জমা দেওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মার্কেটপ্লেসের ফিন্যান্সিয়াল একাউন্টে আপনার পাওনা টাকা জমা হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট সময়ের বিষয়টা একেক মার্কেটপ্লেসে একেক নিয়ম।
আর যদি ফ্রিল্যান্সার ঘণ্টা ভিত্তিক কাজ নিয়ে থাকেন তাহলে উনি যখন থেকে কাজ শুরু করবেন তখন থেকেই টাকাটা তার ফিন্যান্সিয়াল একাউন্টে জমা হয়ে যাবে। এই ঘণ্টা ভিত্তিক কাজগুলো করার জন্য প্রতিটা মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব একটা ঘড়ি বা টাইমার থাকে। আপনি যখন কাজ শুরু করবেন তখন ঐ টাইমার বা ঘড়িটা অন করে কাজ শুরু করতে হয়।
ঐ টাইমার একটু পর পর স্ক্রিন শট নিয়ে থাকে। সেই স্ক্রিন শট চেক করে বায়ার বুঝতে পারে আপনি ঠিকমত তার কাজ করেছেন নাকি অন্য কিছু করে সময় পার করছেন। তাই সাবধান কখনও টাইমার অন করে অন্য কিছু করতে যাবেন না। আপনি যদি ১০ মিনিট কাজ করে অফ করে দেন, আপনার একাউন্টে ঐ ১০ মিনিটের টাকাই জমা হবে।
এভাবে দুই পদ্ধতিতে আপনি কাজ করে টাকা পাবেন। টাকাটা আপনার মার্কটপ্লেসে জমাতো হলো এখন এটা পকেটে কিভাবে আনবেন? প্রতিটা মার্কেটপ্লেসের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম। মার্কেটপ্লেসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা না হলে আপনি তা নিজের পকেটে আনতে পারবেন না।
ধরুন আপনি ২০ ডলারের একটা কাজ করলেন। মার্কেটপ্লেসে এখান থেকে তার কমিশন কাটবে তার নির্ধারিত রেট অনুযায়ী। বেশীর ভাগ মার্কেটপ্লেসই ২০% কেটে রেখে তারপর আপনাকে বাকী টাকা দেবে। এটা শুধু ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে নয়, বায়ারের কাছ থেকেও কেটে নেয়।
এভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হলে অর্থাৎ উত্তোলনযোগ্য টাকা জমা হলে আপনি উথড্র করতে পারবেন। উথড্র বিভিন্নভাবে করা যায়। যেমন ওয়্যার ট্রান্সফার বা সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে আপনার টাকাটা বাংলাদেশের যেসব ব্যাংকে অনলাইন ট্রানজেকশনের সুবিধা আছে, সেসব ব্যাংকে আপনার নামে একাউন্ট থাকলে সে একাউন্টে টাকা নিয়ে আনতে পারবেন। সেজন্য কিছু ট্রান্সফার ফি কাটা যাবে।
উথড্রের আরেকটা পদ্ধতি হলো পেওনিয়ারের মাধ্যমে। পেওনিয়ার একটা ভার্চুয়াল একাউন্ট। আপনি প্রথমে উপার্জিত ডলারটা পেওনিয়ারে ট্রান্সফার করবেন। এরপর পেওনিয়ার এর কার্ড আছে সেটার মাধ্যমে আপনি টাকা ক্যাশ আউট করতে পারেন।
অথবা চাইলে পেওনিয়ার থেকে ব্যাংকে আনতে পারেন। বর্তমানে পেওনিয়ার থেকে বিকাশের মাধ্যমেও টাকা আনা যাচ্ছে। আপনি আপনার সুবিধা মত যেকোন একটি পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার উপার্জিত টাকা নিজের কাছে আনতে পারবেন।
পেওনিয়রারের মত এমন আরো অনেক ধরণের পদ্ধতি রয়েছে।
তবে প্রতিটা পদ্ধতির জন্য কিছু চার্জ কাটবে। প্রতিটা মার্কেটপ্লেসের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি। চার্জও ভিন্ন। সব মার্কেটপ্লেসে সব ধরণের উথড্র সিস্টেম থাকে না। সেজন্য একাউন্ট করার আগে দেখে নিতে হয় যে মার্কেটপ্লেসে আমি কাজ করব সে মার্কেটপ্লেসে আমার কাছে আছে এমন উথড্র পদ্ধতি আছে কিনা।
যেমন কিছু কিছু মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে শুধুমাত্র পেপাল সাপোর্ট করে। সেগুলোতে একাউন্ট করলে আপনাকে অসুবিধায় পড়তে হবে। যদি আপনার পেপাল না থাকে।
একটা বিষয়ে খুব সর্তক থাকতে হবে। আপনি মার্কেটপ্লেসে যে ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে টাকা আনতে চান মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করার সময় ব্যাংক একাউন্ট এ যেভাবে নাম দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই একাউন্ট করতে হবে। তা না হলে টাকা তুলতে পারবেন না। আশা করছি ফ্রিল্যান্সিং এ ফ্রিল্যান্সারদের টাকা উত্তোলন নিয়ে আর কোন সংশয় নেই।
*হ্যাপী ফ্রিল্যান্সিং*