হোয়াইট হাউজ ভিজিট
জুলাইয়ের শেষের দিক থেকে আগষ্টের প্রথম দিকের আবহাওয়াটা খুবই ভালো ছিল। আমরা ছিলাম ওয়াশিংটন ডিসির পাশেই আরলিংটন সিটিতে। আরলিংটন সিটিটা ভার্জিনিয়া রাজ্যে পড়েছে।
বাসা থেকে বের হয়ে ২ মিনিট ড্রাইভের পর মেইন রোডে উঠতেই পটোম্যাক রিভার। এতগুলো চওড়া রাস্তা আর ট্রেন লাইনের জন্য নদীটা চোখেই পড়েনা। নদী পার হলেই ওয়াশিংটন ডিসির সব মন্যুমেন্ট, সারি সারি যাদুঘর আর দেড়শ-দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দালানসমূহ।
খুব ব্যস্ত সময় না হলে ৫-৬ মিনিটের মধ্যে বাসা থেকে গাড়ি চালিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে আসা যায়। বাসার ছাদ থেকে দিনে এবং রাতে দেখা যেত ডিসির আইকনিক বিল্ডিং এবং মন্যুমেন্টসমূহ। বাসার খুব কাছেই মেট্রো স্টেশন ছিল বলে আমরা মেট্রোতে চড়েই বেশীরভাগ সময়ে ডিসিতে আসতাম।
এই কোর্সে বাংলাদেশ থেকে আর্মির এক ভাই ও এসেছেন। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। উনার দুই মেয়ে আর আমাদের এক ছেলে, এক মেয়ে। বয়সেও তারা কাছাকাছি সেজন্য খুব তাড়াতড়ি বাচ্চাদের মধ্যেও সুসম্পর্ক তৈরি হয়। ।
আমরা দুই পরিবার ঠিক করেছি আজ মেট্রোতে করে ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে হোয়াইট হাউস দেখব। যথারীতি মেট্রো থেকে বের হয়ে হোয়াইট হাউস খুঁজতেই একটু পরেই দেখলাম সেই আইকনিক বিল্ডিংটা। যার ছবি দেখে আমরা মনে করতাম সেটা হোয়াইট হাউজ। খুব সুন্দর একটা গম্বুজ, সামনে বিশাল খোলা জায়গা এবং একটা ওভাল শেইপের লেক, স্বচ্ছ পানির ধারা। পানির নীচে অনেক কয়েন পড়ে আছে। মনের ইচ্ছা প্রকাশ করে এখানে কয়েন ফেললে নাকি তা পূরণ হয়।
বাসার ছাদ থেকে দেখে আমরা ঐ বিল্ডিংকেই হোয়াইট হাউস ভাবতাম। তাই মনে হচ্ছিল আমরা ঠিক জায়গায় এসেছি। কিন্ত হোয়াইট হাউজের সামনে একটা ক্রিসমাস ট্রি আছে জনতাম, সেটা খুঁজে পাচ্ছিলামনা। তাই একটা সময় ওখানকার সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, যেটাকে আমরা হোয়াইট হাউজ ভাবছি সেটা হোয়াইট হাউজ না। সেটা হচ্ছে ওদের ‘ক্যাপিটল’ মানে আমেরিকার ‘পার্লামেন্ট ভবন’! তার মানে আমরা এতদিন বাসা থেকে দেখে যেটাকে ‘হোয়াইট হাউস’ বলতাম সেটা ভুল ছিল!
যদিও ক্যাপিটল দেখে ভালো লেগেছে কিন্তু এই ভুলটার জন্য আমরা নিজেরাই লজ্জিত হলাম। ক্যাপিটলের সামনে অনেক দর্শনার্থীর মাঝে বিয়ের যুগলও আছে। জানতে পারলাম অনেকের স্বপ্ন থাকে এখানে বিয়ে করার। ক্যাপিটলের সামনে বিয়ে করা অনেকের জন্যই বিশাল ব্যাপার।
তবে সেখান থেকে হোয়াইট হাউস খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল। ক্যাপিটলের সামনে থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে ‘ন্যাশনাল মল’ মানে চওড়া একটা লন, যার দু’ধারে দর্শনার্থীদের হাঁটার রাস্তা। এর দুদিকে সারি সারি বিভিন্ন যাদুঘর। মলের আরেক প্রান্তে রয়েছে অনেক উচুঁ একটা টাওয়ার, যাকে বলে ওয়াশিংটন মন্যুমেন্ট। সেখান থেকে মল এল (L) শেইপ হয়ে আরও প্রায় আধা কিলোমিটার ডান দিকে আসলেই হোয়াইট হাউস। আমরা হেঁটেই সেখান থেকে হোয়াইট হাউসের সামনের লনে আসলাম। সেখানে এসে জানলাম, হোয়াইট হাউজে ঢুকার পাশ নিয়ে আসলে হোয়াইট হাউসে ঢোকা যায়।
সেদিন যদিও হোয়াইট হাউসের ভিতরে যেতে না পারলেও এরপর আরেক দিন আমাদেরকে অফিসিয়ালি একবার ডি সি ট্যুরে নিয়ে গিয়েছিল। তখন দেখা হলো হোয়াইট হাউজ। বাহিরে থেকে নয় ভিতরে ঘুরে ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। ক্যাপিটল, মন্যুমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ওয়ার-১ এবং ওয়ার্ল্ড ওয়ার-২ মেমোরিয়াল, লিংকন মেমোরিয়াল, ভিয়েতনাম ওয়ার মেমোরিয়াল, কোরিয়ান ওয়ার মেমোরিয়াল এবং ন্যাশনাল ক্যাথেড্রাল (ডিসির সবচাইতে বড় চার্চ)। সেদিন ডিসির অনেক কিছু একসাথে দেখার সুযোগ হয়েছিল।