জিনদের নিয়ে কিছু কথা

জিনদের রাজত্ব

কলমেঃ শাহানা মুক্তি

জিনরা বাস করে কোহেকাফ নগরে নানুর মুখে শোনা কাহিনী। মুসলমান হিসাবে জিনদের অস্তিত্বে অবশ্যই বিশ্বাসী।জিনদের গল্প বলার সময় নানুর মুখের চাহনী, বাচনভঙ্গীর যে থমথমে শীতল স্পর্শ দেখতাম তা মনে পড়লে এখনও ভয়ংকর মনে হয়।

আমাদের ছোটবেলা হরর মুভি বা হ্যালোউইন এর কথা কস্মিন কালেও শুনিনি। নানু, দাদু, মা, খালা, ফুপু ছিল ভয়ংকর গল্প গুলো শোনার একমাত্র অবলম্বন। আমার নানু ছিল খুব রসিক এবং কেতাদুরস্ত। স্বভাবত নানু, দাদু যেমন হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে দাদু ছিল সহজ সরল মাটির মানুষ। ছোটবেলায় সাপ্তাহিক নাটক গুলোতে যে নায়ক নায়িকারা অভিনয় করতো তারা স্বামী বা স্ত্রী নন-দাদুকে বিশ্বাস করাতে কস্ট হতো।

প্রসংগত নানু যখন কাহিনি বলছিলেন ওনার ছোট বোনের উপর জিন সওয়ার হয়েছিল, নানুর ছোট বোন সংগত কারনে আমার ও নানু। ঐ নানু একদিন সন্ধ্যায় সম্ভবত উনার বিয়ের পর লাল শাড়ী পড়ে, চুল ছেড়ে হাঁসদের আয় আয় বলে ডাকছিলেনএক্স। তখন একজন জিন ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং নানুর ডাকে সাঁড়া দিয়ে নানুর উপর ভর করেছিলেন। এরপর নানুর আচরনে অনেক পরিবর্তন আসে। তৎকালীন সময়ে এর পরবর্তিতে হুজুর দরবেশ এর শরণাপন্ন হওয়া এবং তাবিজ, ঝাড ফুঁক এবং সুস্হতা। এই সব ঘটনার ব্যাখ্য আমার আজ পর্যন্ত জানা হয়নি।

তবে বর্তমান সময়ের সাথে কল্পনা করলে, যে হরর মুভি গুলো আছে আমি দু একটা দেখেছি। আমি ,জিন ভুত অনেক ভয় পাই। এরমধ্যে এনাবেল কনজু্রিং, কিংবা ডাব্বে আমার দেখা হয়েছে। নানুর বলার ভঙ্গির সাথে আমি সিনেমা হলের স্ক্রিন বা টিভির স্ক্রিনের সাথে খুব একটা বেশী ফারাক খুঁজে পাইনা। আমাদের সময় ভুতের মুভি বানানো হতো না তবে বলার ভংগী আমাদের ঠিকই ভয় পাইয়ে দিতো।

এছাড়া আরো শোনা গল্প তবে কার কাছ থেকে শুনেছি মনে করতে পারছিনা। সেটাও ভয়ের ব্যাপার ছিল মিস্টির দোকান গুলোতে যে মিস্টি বানানো হয় তা সব মানুষ কেনে না অর্ধেক নাকি জিনরা কিনে। কারন জিনদের প্রিয় খাবার মিস্টি। তাই মিস্টির দোকানে গেলে পাশের লোকটিকেই আমার জিন মনে হতো। আমাদের স্কুলে সবাই বলতো সাইন্স বিল্ডিং এ ভুত আছে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ঐ বিল্ডিং এ একা যাওয়া যাবেনা। তারপর খালাদের মুখে শুনতাম আরো কিঁছু কল্প কাহিনী।

তারপর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলাম তখন শুনতাম অনেক জীনের বাচ্চারা বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। আমি মনে মনে ভাবী জিনদের কি কোনো শিক্ষাপ্রতিস্ঠান নেই। প্রতিটি যুগ ,সময় তার নিজ, একান্ত ভাবে ভয়, আনন্দ উপভোগ করেছে। দুটি যুগের এই বিস্তর ব্যবধান শুধু প্রযুক্তির উত্তরণ। তবে আমি মনে করি পৃথিবী যতদিন থাকবে এই প্রশ্ন গুলো আমাদের মনে আসবে। এই ভয় গুলো আমাদের থাকবে। এভাবেই আমাদের এই ছোট জীবন ইহলৌকিক জীবন থেকে উত্তরণের মাধ্যমে পরলৌকিক ভ্রমনে পা বাড়াবে। সবচেয়ে বড় ভয়তো আল্লাহর ভয় তাই নয় কি ?

Leave a Comment