নিউইয়র্ক ভ্রমণ
আমেরিকায় এসে নিউইয়র্ক ভ্রমণ না করার অর্থ অনেক কিছু মিস করা। আমাদের অনেক আত্নীয় ও বন্ধু বান্ধব আছেন যারা নিউইয়র্কে থাকেন। আসার পর থেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছিল। মার্চ মাসে আমাদের সবার একটা ছুটি আছে সেই ছুটিতে সেখানে যাবার প্ল্যান করি।
এই সময়টাতে শীত একটু কমতে শুরু করে তাই বেড়ানোর জন্য এইটা একটা উপযুক্ত সময়। অনলাইনে ২ মাস আগে বাসে আসা যাওয়ার টিকিট কেটে রাখলাম। আমরা প্রথমে যাব জ্যাকসন হাইটসে। সেখানে আমাদের এক বড় ভাইয়ের বাসায় উঠব।
নির্ধারিত দিনে ২৭শে মার্চ রওয়ানা দিলাম নিউইয়র্ক ভ্রমণের উদ্দেশ্য। সাড়ে চার ঘণ্টা পর আমরা নিউইয়র্ক সিটিতে পৌঁছালাম। বাস স্টেশন থেকে নামার পর সাবওয়েতে করে জ্যাকসন হাইটস যেতে হবে। ভার্জিনিয়ার মেট্রোকে নিউইয়র্কে সাবওয়ে বলে।
ভার্জিনিয়ার মেট্রো স্টেশন এবং রেলগুলো পরিচ্ছন্ন, টিপটপ, এবং ঝকঝকে। কিন্তু সেই তুলনায় নিউইয়র্কের সাবওয়ে স্টেশনগুলো অনেক পুরানো এবং খুব বেশি পরিচ্ছন্ন নয়। এই সাবওয়েগুলোর বয়স ২০০ বছরের বেশি।
সাবওয়ে থেকে নেমেই জ্যাকসন হাইটস। মনে হলো আমাদের পুরান ঢাকায় নেমেছি। মাথার উপর দিয়ে সাবওয়ে লাইন। দেখে মনে হচ্ছে এখনি ভেঙ্গে মাথার উপর পড়বে। কাকের কা কা আর টয়লেটে ভর্তি রাস্তা। চারপাশে অনেক বাঙ্গালী।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ লাগছে দেখে আমার কাছে ভালোই লাগছে, কিন্তু বাচ্চারা কিছুতেই মানতে পারছে না। তাদের কথা আমেরিকায় কেন এত অপরিচ্ছান্ন শহর আর রাস্তা থাকবে? তাদের প্রশ্নের জবাব আমার জানা নাই। সবার মতো তাদেরও আমেরিকা নিয়ে অনেক উচ্চ ধারণা। আমেরিকাতেও অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ নেই, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই এসব তাদের জানা নেই।
সাবওয়ে থেকে আমার ভাইয়ের বাসা খুব একটা দূরে নয়। হাঁটার দূরত্ব। আসার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে সেই অনুযায়ী কাপড় নিয়ে এসেছি। পূর্বাভাসে জানলাম খুব বেশী শীত নাই। তাই হালকা কাপড়ে রওয়ানা দিলাম। স্টেশন থেকে বের হয়ে দেখি প্রচন্ড শীত সঙ্গে বাতাস। এত শীত যে তাতে হাঁটা দায়। আমরা দৌঁড়ে দৌঁড়ে আমার ভাইয়ের বাসায় পৌঁছালাম। আবারও আমেরিকার আবহাওয়া নিয়ে হোঁচট খেলাম।
বিকেলে জ্যাকসন হাইটস পরিদর্শনে বের হলাম। খুব বেশি বড় তা নয়। আমাদের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাণের পুরান ঢাকা। সব বাঙ্গালী দোকান। সাইনবোর্ডগুলো বাংলায়- আড়ং, সাদাকালো, আলাউদ্দিন সুইটস ইত্যাদি নামের বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত দোকান রয়েছে।
এখানে সকলে সকলের চেনা। সবাই বাংলা ভাষাভাষী। বাংলাদেশের সব ধরণের খাবার, জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যায়। এই এলাকায় যারা থাকে তারা বাংলাদেশকে খুব একটা মিস করেন না। বিদেশে দেশী খাবার, নিজের ভাষা এগুলোকে সবাই কম বেশী মিস করে থাকে। এখানে সেগুলো পরিপূর্ণ। সেই সময়ে আমি সেখানে কাঁচা কাঠালও বিক্রি হতে দেখেছি। অনেকদিন পর মনে হলো বাংলাদেশেই আছি।