আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ ২৬ । আদালতের অভিজ্ঞতা

আমাদেরকে অনেকেই বলেছিল কেসের ডেট যেহেতু জুলাইয়ের ২৪ তারিখ আর তোমাদের ফ্লাইট জুনের ২৪ তারিখ, তোমরা দেশে চলে যাও, কিচ্ছু হবে না। কিন্তু আমরা কোন কিছু অমিমাংসিত রেখে যেতে চাইনি। আমার বর তার ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষকে জানালো এবং বলল আমরা যাওয়ার আগে এই বিষয়টা কোর্টে মীমাংসা করে যেতে চাই। অফিস থেকে চেষ্টা করে কেসের ডেট এগিয়ে জুনের ১৪ তারিখ নতুন সময় নিল।

নির্ধারিত দিনে আমরা কোর্টে পৌঁছালাম। ইউনিভার্সিটি থেকে  আমাদেরকে নিয়ে একজন প্রফেসর এসেছিল। বেশির ভাগই দেখলাম অপরাধ স্বীকার করে ফি মিটিয়ে চলে যাচ্ছে। পরে এর আসল কারণ অনুধাবন করতে পেরেছি।

নির্ধারিত সময়ে বিচারক আমার স্বামীকে ডাকল। কোর্টের এটর্নী জানালো প্রথম কেসটা (ড্রাইভিং লাইসেন্স ইনভেলিড) খারিজ হয়ে গেছে। ২য় কেসে আমরা যদি মনে করি অপরাধী তাহলে ৩০ ডলার এবং কোর্ট ফি ৬১ ডলার দিলে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। আমার স্বামী বলল উনি নিজেই ডিফেন্ড করবে। কারণ আমরা জানি আমরা নির্দোষ। ওখানে এইরকম আরো অনেকেই এসেছে। উনি ডিফেন্ড করার জন্য উঠলেন। পুলিশ অফিসারটিকে বলল, আমিতো তোমাকে যাওয়ার জন্য সাইড দিয়েছি তাও তুমি কিভাবে বলো যে আমি সাইড দেয়নি। পুলিশ অফিসারটি কোন উত্তর দিতে পারলো না। কিন্তু তারপরও বিচারক পুলিশের পক্ষে রায় দিয়ে মোট ১০৬ ডলার জরিমানা করলো।

অবশেষে বুঝলাম কেন সবাই কোন তর্ক না করে দোষ স্বীকার করেই ফি দিয়ে চলে যায়। আমাদের মত যারা নতুন তারাই ধরাটা খায়। বুঝলাম দোষ স্বীকার করলে ১৫ ডলার কম দিয়ে পার পেয়ে যেতাম। কিন্তু তাতে এই নিদারুণ আদালতের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতাম! আদালতের রায় নিয়ে নতুন কিছু জানতে পারলাম। জরিমানা জমা দিয়ে ফিরলাম।

আমাদের প্রফেসর সাহেবও রায় শুনে হতবাক হলেন। তারপর উনি বললেন বিচারক পুলিশের পক্ষে রায় দিয়েছেন কারণ তা না হলে পুলিশ কাজ করবে না। এসব জরিমানা, ট্যাক্সের টাকায় প্রতিটি কাউন্টি চলে। ওদের বেতন-ভাতা সব এইসব আয় থেকেই হয়। ওদেরকে প্রতি মাসে একটা টার্গেট দেওয়া হয়। কোন মাসে কম হলে তাদের বেতনও আটকে যায়। সুতরাং সব জলের মত পরিস্কার।

আমেরিকায় এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে কিনা তার জীবনে টিকেট পায়নি। আমার এক আত্নীয়ের কাছ থেকে শোনা উনার দোকানে  কয়েকদিন পর পর পুলিশ এসে টিকেট দিয়ে যায়। আর এমন এমন সব কারণ দিয়ে টিকেট দেয় যা হাস্যকর। সাইনবোর্ড কেন এখানে রাখা হলো তার জন্য টিকেট, অথচ দুদিন আগেই সাইনবোর্ড রাখার জায়গা পুলিশই ঠিক করে গিয়েছিল। উনারা বুঝে গেছেন এদের স্বভাব। অতএব বুঝতে বাকী রইল না এদেশের পুলিশের চরিত্র কেমন। ওদের দূর্নীতি অন্যরকম। ওরা জনগণের কাছ থেকে টাকা নেয় সরকার চালানোর জন্য আর আমাদের পুলিশ টাকা নেয় নিজের পকেট ভারী করার জন্য।

আমাদের দেশের ক্রাইম সবার চোখে পড়ে। ছোট দেশ, জনবহুল দেশ, সুশাসনের অভাব। তাই আমাদের দেশের ক্রাইমটা খুব বেশি। কিন্তু ওদেরও অনেক ক্রাইম হয়। ওদেরও ডাক্তারদের এমন অনেক মারাত্নক ভুল হয় যা আমাদের এখানে কখনও হয় না। টিভিতে একবার একটা শো দেখাল, যেখানে এক মহিলার বাচ্চা হওয়ার ৬ মাস পর প্রচন্ড পেট ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে গেল। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানাল তার পেটে ৯ মাসের একটা বাচ্চা আছে তাকে এখনি ডেলিভারী করাতে হবে!! মহিলা কোনমতেই তা বিশ্বাস করতে পারছিল না কিন্তু আসলে তাই সত্যি হলো। আমাদের দেশে যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটত তাহলে ডাক্তারের কি হাল হতো তা স্পষ্টতই অনুমেয়। টিভি চ্যানেল, নিউজ, মিডিয়া কোন কিছুই বাদ যেত না। ওদের এমন আরো অনেক ঘটনা ঘটে থাকে যা তার অপরাধ বা ভুল হিসাবে না ধরে ঘটনাটাকে মিরাকেল হিসাবে দেখায়।

Leave a Comment