কিছু ভালোবাসার স্মৃতি মনের গহীনে লেপ্টে থাকে আজীবন। কোনো বিষন্ন বিকেলে সেই স্মৃতি ভালোলাগার আবেশ ছড়ায়।
শেষবার তোমায় দেখলাম শাদায়! ধবধবে শাদায়! সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসলে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকা গ্রামেই রেখেছিল তোমায়! তোমার বাপ বড় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল তোমাকে ঘাড় থেকে নামাতে।এলাকার সবাই মিলে যখন তোমাকে দেখতে গেলাম তখন তোমার নবজাতক অবাক হয়ে পৃথিবী দেখছে আর তুমি আকাশের ওপারের আকাশে চলে গেছ! ওপারের আকাশ দেখতে কেমন? ওখানেও কী তুমি লাল ফিতার দুই বিনুনি নাচিয়ে নাচিয়ে হেঁটে বেড়াও? তোমার বিনুনি নাচানো স্বভাবে আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম অবুঝভাবে। আমার প্রথম দেখা সেই তুমিটার ছিল লজ্জা রাঙা হাসি, সেই হাসি আমাকে ডানা মেলে উড়াতো আকাশে। গ্রামে একসাথে স্কুলে যেতাম, গাদন, বৌচি, গোল্লাছুট, কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলতাম। শীতে ভুরকেভাত খাওয়ার ধুম পড়ত। এভাবে সকালটা দুপুর, দুপুরটা বিকেল আর বিকেলটা সন্ধ্যে হয়ে যেত। ঐ সময়টার মতো ভালোবাসার আনন্দ আর কখনো পাইনি। বিয়ে হয়ে তুমি চলে যেতেই আমার ভালোবাসারা ম্লান হয়ে যায়। জীবনের ঘনঘটা শুরু না হতেই এভাবে চলে যাবে ভাবিনি। বিশ্বাস কর, খুব কষ্ট হয় আমার। তোমাকে জানতে দিইনি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। জানো-ভালোবাসা এমনও হয়। বুকের বাঁ পাশে ভালোবাসার হাহাকার পুষে রেখেছি।
দ্বিতীয়বার দেখলাম লাল ব্লাউজের সাথে কলাপাতা শাড়ি, মাথায় ফুলের মুকুট পরে বৈশাখী সাজে বৈশাখী মেলায় মনিহারি দোকানে কি যেন খুঁজছো। খুব ইচ্ছে হলো তোমায় এক ডজন চুরি কিনে দিই। তারপর ভাবলাম-সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা…। দূর থেকে শুধুই দেখলাম। দূর থেকে ভালোবাসার মজাই আলাদা। তোমায় অপ্সরীর মতো লাগছিল। তোমার সামনে যদি আয়না হয়ে দাঁড়াতে পারতাম!
তোমার মত গভীরভাবে আর কেউ আমার মনে দাগ কাটতে পারেনি। তোমাকে আজও ততটাই ভালোবাসি যতটা ভালোবাসাকে ভালোবাসা বলে।