আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ -১৩ | Epcot

ডিজনি ওয়ার্ল্ড-Epcot Theme Park

আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ভার্জিনিয়া থেকে। তখন চারপাশের গাছগুলো মনে হচ্ছিল আগুনে পুড়ে যাওয়া গাছ। কালো রঙয়ের পাতাবিহীন গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হয় শিশুর পেন্সিলে আঁকা গাছ। ভার্জিনিয়া পার হয়ে মেরিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, আটলান্টা হয়ে ফ্লোরিডার দিকে যেতে যেতে কালো গাছগুলো ধীরে ধীরে সবুজ ও পাতাযুক্ত হতে থাকে। ফ্লোরিডায় যখন পৌঁছি তখন একেবারে সবুজে ঘেরা ফ্লোরিডা। সত্যি কত রূপে এক আমেরিকা!

চলতে চলতে রাস্তায় বিশাল গেটে “ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড” লিখা আপনাকে স্বাগত জানাবে ডিজনি তার পৃথিবীতে। বিশাল এলাকা জুড়ে ডিজনির পার্ক। ২৭০০০ একর বা ১২২ বর্গ কিলো মিটার এলাকা জুড়ে ডিজনি। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ ভাটিকান সিটির আয়তন .৪৯ বর্গ কিলোমিটার। ডিজন ওয়ার্ল্ড আয়তনে পৃথিবীর পাঁচটি ছোট দেশের চাইতে বড়।

Epcot, Magic Kingdom, Hollywood Studio, Animal Kingdom, Typhoon Lagoon, Blizzard Beach এই ৬টা পার্কের সম্বন্বয়ে ডিজনি ওয়ার্ল্ড। একেকটা পার্ক থেকে আরেকটা পার্ক অনেক দূরে দূরে। ডিজনি ভিজিট করা আর একটা দেশ ভিজিট করা একই কথা। আমরা সরাসরি চলে গেলাম পার্ক Epcot এ। 

গাড়ির পার্কিং এলাকা দেখেই হতবাক। লেইন নম্বর মনে না রাখলে গাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না। পার্কিং এলাকা থেকে মেইন পার্কের গেটও অনেক দূরে। পার্ক গেটে যাওয়ার জন্য রয়েছে তাদের নিজস্ব ট্রেন। ট্রেনে লাইন ধরে উঠতে হয়। ট্রেন পার্ক গেটে নামিয়ে দেয়। সেখানেও অনেক লম্বা লাইন পেরিয়ে  পার্কের ভিতর ঢুকলাম। ওদের যে রাইডেই উঠতে চাই সে রাইডেই দীর্ঘ লাইন। কতক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হবে তা মনিটরে দেখা যায়। যেসব রাইডে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় বুঝতে হবে আপনার ভাগ্য ভালো। কোন কোনটার জন্য ১-২ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়।

এই সময়টা ক্রিসমাসের বন্ধ হওয়ায় অনেকেই  ছুটি কাটাতে এখানে এসেছে। ওদের সিস্টেমটা খুব ভালো। ইজি পাস নিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে কোন লাইন ছাড়া রাইডে উঠা যায়। স্পেসশীপ, সোরিন, মিশন স্পেস, টেস্ট ট্র্যাক এই রকম অনেক ধরণের রাইড, রোলার কোস্টার, বোট রাইড, 3d শো রয়েছে। কিছু কিছু রাইড খুব মজার ছিল। অনেক রাইডে উঠলে মনে হতো হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে।

Epcot এ বিভিন্ন দেশের যেমন মরক্কো, ফ্রান্স, চায়না, ইতালী, ইউকে, কানাডা, ইউএসএ এমন অনেক দেশের প্যাভিলিয়ন রয়েছে। সেগুলোও খুব সুন্দর করে সাজানো। প্রতিটি প্যাভিলিয়নের ভিতরে রেস্টুরেন্ট, মুভি, শো, দোকান, কিছু রাইডও রয়েছে। একসাথে অনেক দেশের স্বাদ পাওয়া যায়। বাচ্চাদের সাথে আমরাও খুব উপভোগ করলাম। 

রাত ১০ টার মধ্যে হোটেলে পৌঁছাতে হবে। পার্ক থেকে হোটেল ৩০ মিনিটের রাস্তা। তাই ৯ টার দিকে পার্ক থেকে বের হয়ে রওয়ানা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হোটেলে পৌঁছালাম। অনলাইনে হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল। 

হোটেলে পৌঁছে আরেক বিড়ম্বনার শিকার হলাম। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানালো যে আমাদের বুকিং বাতিল! সব কাগজ-পত্র দেখানোর পর যে কোম্পানীর মাধ্যমে বুকিং দেওয়া হয়েছে তাদেরকে হোটেল কতৃপক্ষ ফোন করল। তারা জানল আগামী কাল সকাল ৮ টার মধ্যে ওদের অফিসে গিয়ে একটা লেকচার শোনার পর তারা আমাদের বুকিং কনফার্ম করবে। তবে আজ রাতের জন্য হোটেলে থাকতে হলে আজকের ভাড়াটা হোটেলের বর্তমান রেট অনুযায়ী দিতে হবে। বুকিং কোম্পানী কনফার্ম করলে তখন তা সম্বন্বয় করা হবে। আরেকটা ছোট টেনশন নিয়ে ঘুমালাম।

Leave a Comment