নায়াগ্রা জলপ্রপাত
নায়াগ্রা জলপ্রপাত আমাকে সবসময়ই টানত। ডেভিড কপারফিল্ডের হেলিকপ্টার থেকে নায়াগ্রায় পড়ে যাওয়ার দৃশ্য আমার চোখের সামনে সবসময় ভাসত। ঐ দৃশ্যটা আমার মনের মণিকোটায় এমনভাবে গেঁথে ছিল যে ডেভিডের ঝাঁপ দেওয়া দেখে আমার মনে হতো আমি সত্যি সত্যি তার নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য সামনে থেকে অবলোকন করছি।
সেপ্টেম্বরে তিন দিনের একটা ছুটি ছিল। হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম এই সময়ে যাওয়াটা হবে উপযুক্ত সময়। সিজনটাও খুব ভালো। ক’দিন পর থেকে ঠান্ডা পড়া শুরু হয়ে যাবে। আমাদের সেই পরপোকারী ভাই এবং আরোও একটি পরিবারসহ আমাদের ভ্রমণ শুরু করি। ভাই তার নিজস্ব গাড়ী নিয়ে আর আমরা একটা গাড়ী রেন্ট করে নায়াগ্রা দেখার উদ্দেশ্যে বের হই।
৬ই সেপ্টেম্বর’২০০৯ প্রায় ৮ ঘণ্টা ড্রাইভ করে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন থেকে নিউইয়র্কের বাফেলোয় পৌঁছালাম। নায়াগ্রা জলপ্রপাত আমেরিকা এবং কানাডার সীমান্ত অবস্থিত। নিউইয়র্কের বাফেলোর ২৭ কিমি উত্তর-উত্তর-পশ্চিমে এবং কানাডার টরন্টো থেকে ৬৯ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে আন্তর্জাতিক সীমানার উপর অবস্থিত। এ পাড়ে আমেরিকা আর ঐ পাড়ে কানাডা।
আমরা সরাসরি চলে গেলাম নায়াগ্রা ফলস দেখার জন্য। প্রথম দর্শনে নায়াগ্রা দেখে বারবার আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টির জন্য সুবাহানআল্লাহ পড়তে লাগলাম। তাঁর দরবারে আমাদেরকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করার সৌভাগ্য দানের জন্য শোকর আদায় করতে লাগলাম। আমি অল্পতেই তুষ্ট। নায়াগ্রা নিজের চোখে দেখছি আমার জন্য এটা বিশাল ব্যাপার। তাই আল্লাহর কাছে আমার শোকরানার শেষ নেই। এখনও এই মুহুর্তে আমি আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করছি। নায়াগ্রায় যারা গিয়েছে তাদেরকেও একই কথা বলতে শুনেছি প্রথম দর্শনে মুখ দিয়ে সুবহানআল্লাহ বের হয়ে যায়।
সময়টা ভালো ছিল বলে প্রচুর দর্শনার্থী ছিল। প্রতিবছর ৩০ মিলিয়ন লোক নায়াগ্রা ভিজিট করে। প্রথম দর্শন শেষ করে এবার গেলাম হোটেল খুঁজতে। হঠাৎ করে ভিজিটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগে থেকে হোটেল বুক করে যাইনি। আমরা ভালো কোন হোটেলই পাচ্ছিলাম না। অনেক খোঁজাখুজির পর একটা হোটেলে উঠে রাত কাটিয়ে পরদিন একটা প্যাকেজ ট্যুর নিলাম।
খুব কাছ থেকে জলপ্রপাত দেখার জন্য বোট ট্যুর ছিল। অদ্ভুত অনুভূতি। একপাশে আমেরিকা অন্যপাশে কানাডা। বোট ট্যুরে গেলে দু’দেশ থেকেই নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখার সুযোগ হয়। বোটে থাকলে প্রচন্ড পানির ঝাপটায় ভিজে যায় তাই সবাইকে রেইনকোট দেওয়া হয়েছিল। সত্যিই অপূর্ব সেই পানি পড়ার দৃশ্য এবং শব্দ। জলপ্রপাতের পাহাড়ের পাশ দিয়ে উঠে দেখারও সুযোগ ছিলো। সেটা দেখার আনন্দটা অন্যরকম।
সব ট্যুর শেষ করে দুপুরের লাঞ্চ ও আরোও কিছু দর্শনীয় জায়গায় ভিজিট করাতে করাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এদিকে হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও শুরু হলো। কিন্তু তাই বলেতো রাতের নায়াগ্রার রূপ না দেখে ফেরা যাবে না!
রাতের নায়াগ্রার রূপ দিনের চাইতে ভিন্ন। অনেক আলোর খেলায় নায়াগ্রা তার আরেকরূপ প্রদর্শন করে। রাতের নায়াগ্রা না দেখা মানে নায়াগ্রার রূপ অর্ধেক দেখা। সবমিলিয়ে দিন ও রাতের নায়াগ্রার রূপ বর্ণনায় আমি অপারগ। কিছু সৌন্দর্য বর্ণনার উর্ধ্বে। মনে অপার শান্তি আর তৃপ্তি নিয়ে রাতে হোটেলে ফিরলাম।
দু’দিনের ট্যুর শেষে ফেরার পথে অনেক জ্যাম ছিল। রাস্তা এক লেইন বন্ধ ছিল কিন্তু তাদের রোড শৃংখলা খুব ভালো। একই লেনে থেকে কেউ কাউকে ওভারটেক করতে পারে না। ওভারটেক করতে হলে লেইন বদলাতে হবে।
সেজন্য আপনি চাইলেও জোরে টেনে যেতে পারবেন না। সন্ধ্যার পর শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। গাড়ি জোরে চালানো যাচ্ছিল না। অবশেষে রাত ১১ টার দিকে বাসায় পৌঁছালাম।
আমেরিকায় অনেক বছর থাকার পরও অনেকেরই সৌভাগ্য হয়না নায়াগ্রা দেখার। আমরা সৌভাগ্যবান যে যাওয়ার অল্পকিছু দিনের মধ্যেই তা দেখার সুযোগ পেয়েছি।