প্রতিটি মানুষের চরিত্র বদলে যায় তার পেশার ধরণ থেকে। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। ভেবে দেখুন আপনি সারাদিন যেখানে কাজ করবেনাপনার সেখানকার অর্থাৎ আপনার কাজের জায়গার মত করেই আপনাকে চলতে হবে। বিষয়টা এমন যখন যে পাত্রে রাখবেন তখন সে পাত্রেরই রূপ ধারণ করতে হয়। এরূপ করতে করতে একদিন আপনি পাত্রের আকারই ধারণ করবেন। অর্থাৎ পেশা ও চরিত্র এক হয়ে যায়।
অর্থাৎ আপনার কর্মক্ষেত্র আপনাকে সেখানকার মতো করে তুলবে। ধরুণ আপনি যদি শিক্ষক হোন তাহলে আপনার ব্যক্তিগত জীবনটাতেও সেই পেশা প্রভাব ফেলবে। আপনাকে নিশ্চয়ই প্রায়ই শুনতে হয় “আমাকে আপনার ছাত্র মনে করবেন না।” এতে হয়ত আপনি মনে কষ্ট পেতে পারেন; কিন্তু আসলেই অবচেতনভাবে আপনার স্বভাবে সময় অসময়ে শিক্ষক স্বভাবটা ঢুকে পড়েছে। আপনি টের না পেলেও অন্যরা ঠিকই বুঝতে পারে।
আমাদের জীবনে আমরা প্রায়ই শুনতে পাই উকিল ও পুলিশের ক্ষেত্রে সকলেই বলে ‘উকিলের মতো জেরা করবেন না’
‘পুলিশের মতো সন্দেহ করবেন না।’ বাস্তবে আসলে তাই হয়। একজন পুলিশ কিন্তু সাধারণ জীবনেও সবকিছুতেই সন্দেহ পরায়ণ হয়ে থাকেন। এমনকি তার সংসার জীবনেও গাল-মন্দ, সন্দেহ এগুলো বিদ্যমান থাকে। সে কিন্তু কোনভাবেই বুঝতে পারে না তার ব্যক্তিগত জীবন, চরিত্র সব কেমন কর্মক্ষেত্রের মতো একাকার হয়ে যাচ্ছে।
একজন উকিলের ক্ষেত্রে দেখবেন ব্যাপারটা আরো জটিল। একজন উকিলকে বিভিন্ন ধরণের কেস নিয়ে কাজ করতে করতে অনেক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে যেতে হয়। এরূপ করতে যেয়ে কেসে জেতার জন্য তাকে কতই না মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়! কর্মক্ষেত্রের এই সকল পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে জটিল ও চালাক মানুষগুলো আরো বেশি কুটিল হয়ে উঠে। আর সহজ সরল মনের মানুষগুলো তাদের সরলতা কখন তাদের কর্মক্ষেত্রের চরিত্রের সাথে হারিয়ে ফেলে তা তারা ঘুনাক্ষরেও টের পায় না। পদে পদে টের পায় তার কাছে মানুষগুলো।
কাছের মানুষগুলো তাদের চেনা এই মানুষটির পরিবর্তনে এতোটাই টের পায় যে তারা মানুষটিকে চিনতেও পারে না। কিন্তু সেই ব্যক্তিটি তেমন কিছু টের পায় না। তার অস্থিমজ্জাতে যে তার কর্মক্ষেত্রের প্রভাব ঢুকে পড়েছে এটা সে টের পায় না।
কর্মক্ষেত্র আর নিজস্বতা কখন যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কেউই টের পায় না। হয়ত এটা নিজের অজান্তেই ঘটে যায়। কর্ম আর ব্যক্তি জীবন অবিচ্ছেদ্য অংগ হয়ে দাঁড়ায়। পেশা আর চরিত্র এক জায়গায় এসে মিশে যায়। প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রে এই কথাটা প্রযোজ্য।