আমার দৃষ্টিতে স্বপ্নের দেশ-৩। প্রথম বাঙ্গালী

প্রথম বাঙ্গালীর সাথে পরিচয়

বাসার পাশেই রাস্তার ওপাড়ে পেন্টাগন সিটি শপিং মল। সেখানে অনেক নামী-দামী ব্র্যান্ডের শপ। তার মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য ছিল কস্টকো (Costco)।  আমেরিকার সবচেয়ে বড় পাইকারী সুপার চেইন শপ। শুধুমাত্র কার্ডধারীরাই কস্টকোতে প্রবেশ এবং কেনাকাটা করতে পারেন। ১০০ ডলার জমা দিয়ে কার্ড করতে হয়। তবে একজন কার্ডধারীর সাথে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা অতিথি সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন।

আমরা তখনও জানিনা এর ভিতর কি আছে। তাই ইচ্ছে হচ্ছিল একবার ভিতরে গিয়ে দেখি। ঠিক এমন সময় কস্টকো’র প্রবেশপথে একজন বাঙ্গালী ভাই ও তার স্ত্রীর সাথে দেখা মিলল। কেমন জানি অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছিল আমেরিকা প্রথম বাঙ্গালীর সাক্ষাত পেয়ে। বিদেশে স্বদেশী কাউকে দেখলে মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

তিনি যখন জানলেন আমরা নতুন এসেছি এবং বুঝতে পেরেছিলেন এখনও  কার্ড করিনি তাই সাথে করে আমাদেরকে নিয়ে ভিতরে গেলেন। কস্টকোর ভিতরে গিয়ে দেখি বিশাল বড় শপ। এতবড় সুপার শপ এই প্রথম দেখলাম। আমাদের কার্ড ছিলনা বলে কিছু কেনাকাটা করিনি। ভাবলাম, যেহেতু বাসার পাশেই তাই পরে কার্ড করে কেনাকাটা করবো। কিন্তু ঐ ভাই আমাদের বাচ্চাদের জন্য একটা স্ন্যাক্স এর প্যাকেট কিনে দিলেন। তাদের আন্তরিকতায় আমরা অভিভুত হয়ে গেলাম।

পরদিন তিনি আমাদের বাসায় এসে আমাদেরকে তার গাড়ীতে করে বাসায় নিয়ে গেলেন। আপ্যায়নের ফাঁকে এখানে এসে তার হতাশার কথা বললেন। দেশে তিনি আমেরিকান অ্যাম্বাসীতে ভালো পদে চাকুরী করতেন। ঢাকায়  বেশ বড় বাসা নিয়ে তিন ছেলেমেয়েসহ স্বপরিবারে থাকতেন। আমেরিকান অ্যাম্বাসীর চাকুরীর সুবাদে আমেরিকাতে আসার সুযোগ হয়েছে। বড় মেয়ে ১৮ বছরের বেশি হওয়াতে তাকে সাথে নিয়ে আসতে পারেননি। ছোট মেয়ে জিপিএ ৫ সহ এস এস সি পাশ করেছিল। এখানে এসে তাকে আবার ক্লাস-১০ এ ভর্তি হতে হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের এস এস সি পাশের সার্টিফিকেট আমেরিকায় গ্রহণযোগ্য নয়।

স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঘন্টা হিসেবে অড জব (মানে যেসব কাজ সাধারণত আমেরিকানরা করে না) করে কোন রকমে সংসার চালান। সেখানে বাসা ভাড়া অনেক বেশী বলে একটা বেজমেন্টে বাসা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকছেন।

আমেরিকায় এসে তাদের একটুও ভালো লাগছে না। প্রতি মূহুর্তে তাদের মনে হচ্ছিল তারা আমেরিকায় এসে ভুল করেছেন। কিন্তু একবার চলে আসার পর আর চাইলেই তো হুট করে চলে যাওয়া যায় না। সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে গিয়ে আর পিছন ফিরা যায় না। তিনি আমার দেখা প্রথম বাঙ্গালী, যিনি স্বপ্নের দেশে পাড়ি দিয়ে পস্তাচ্ছেন।

Leave a Comment