প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
আমেরিকার শরৎ-হেমন্ত কালটা খুবই সুন্দর। বিশেষ করে এই ঋতুতে (Fall season) ওয়াশিংটন ডিসি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি। অনেকে এই সময় ডিসি তে বেড়াতে আসে শুধুমাত্র এই ঋতু উপভোগ করার জন্য।
ইংরেজী ফল (Fall) মানেতো পড়ে যাওয়া। এই সময় গাছের পাতা ঝরে পড়ে। কিন্তু ঝরে পড়ার আগে গাছ প্রকৃতিতে তার রূপ ছড়িয়ে যায়। আল্লাহ যে কত রকমের প্রকৃতি আমেরিকায় দান করেছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
গাছের পাতা যে কত রংয়ের হতে পারে তা ডিসি’র ফল সিজনে দেখা যায়। একই গাছে ৩/৪ রংয়ের পাতা। একবার সবুজ, আবার লাল, টিয়া, হলুদ। অদ্ভুত সুন্দর লাগে গাছগুলোর দিকে তাকালে। ৩/৪ বার রং পাল্টে শেষে গাছ থেকে পাতা ঝরা শুরু হয়।
এ সময় হাঁটতে খুবই মজা লাগে। না গরম, না ঠান্ডা। সবচেয়ে বড় কথা এখানে হেঁটে ঘেমে অস্থির হতে হয়না। সেজন্য অনেকক্ষণ হাঁটা যায়। কোন ক্লান্তি লাগেনা।
বসন্তকালে ডিসিতে ন্যাশনাল চেরী ব্লোসম ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১২ সালে জাপান বন্ধুত্বের উপহার স্বরূপ আমেরিকাকে চেরী গাছ দিয়েছে। বর্তমানে ডিসির ন্যাশনাল মল এলাকা ঘিরে ৩০০০এর বেশি চেরী গাছ রয়েছে।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই উৎসব চলে। তবে প্রতি বছর এই সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সাদা আর গোলাপী চেরী ফুলের সমাহারে ন্যাশনাল মল এলাকা এক অপরূপ রূপে সজ্জিত হয়ে উঠে। এই চেরী ব্লোসমকে ঘিরে অনেক ধরণের কার্যক্রম এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিসির চেরী ব্লোসম উপভোগ করার জন্য অনেকে ওই সময়টায় ডিসি ভিজিট করার জন্য বেছে নেন।
এই বিশাল দেশে সব ধরণের প্রাকৃতিক অবস্থা আছে। যেমন বরফ পড়া এলাকা তেমন মরুভূমি, যেমন সমতল ভূমি তেমন পাহাড়ি এলাকা, তেমনি আবার সবুজ ঘেরা বাংলাদেশের মত। কখনও কখনও মনে হয়েছে আমার দেশের চাইতেও বেশি সবুজ এই দেশের কিছু এলাকা।
আমরা ১০-১১ টা প্রদেশ ঘুরেছি তাতে মনে হয়েছে ওদের ৫১টা প্রদেশ সারা পৃথিবীর প্রকৃতির সম্বন্বয়ে গঠিত। ইউএসএ তে আমাদের সাথে ৩৫ টি দেশের প্রতিনিধি ছিল। আমরা যখন দূরে কোথাও ট্যুরে যেতাম, যেতে যেতে চারপাশ দেখে কখনও মনে হতো যেন আমি আমার দেশের অতি পরিচিত কোন জায়গা দিয়ে যাচ্ছি। ঠিক শ্রীলংকান, পাকিস্তানী, ইন্ডিয়ান এবং আরো অনেক দেশের বন্ধুরাও বলত কোন কোন এলাকা তাদের দেশের মতো। এত বড় দেশ যেন অনেকগুলো দেশের প্রাকৃতিক রূপের সম্বন্বয়ে গঠিত।
আমরা আমাদের দেশকে নদীমাতৃক এবং সবুজ ঘেরা বলি। আমেরিকায় এত নদী আর এত সবুজ দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগত তাহলে এদেরকে কী বলা উচিত? আমেরিকায় বিভিন্ন জায়গায় যেতে যেতে দেখেছি ওদের বিস্তীর্ণ এলাকা খালি পড়ে আছে। এত বিশাল বিশাল খালি এলাকা দেখে মনে হয়েছে এদের এখানে অনেক ছোট ছোট ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এনে বসালে কোন সমস্যাই হবে না।
আমেরিকার বাড়িগুলোর কোথাও বাউন্ডারি চোখে পড়েনি। আমাদের দেশে যেমন বাড়ি করার আগেই বাউন্ডারি দেওয়াটা অতীব জরুরী কাজ। তা যত সংরক্ষিত এলাকাই হোক না কেন বাউন্ডারি থাকতেই হবে। যেন এটাই নিয়ম। ওখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বাড়িগুলোর কোন সীমানা দেয়াল দেখিনি।
হঠাৎ যেতে যেতে দেখা যায় রাস্তার ধারে উচুঁ উচুঁ দেয়াল ঘেরা এলাকা। এমন বাউন্ডারি দেখে অবাক হতাম। এত উঁচু যে বাহির থেকে কিছু ভিতরে দেখা যায় না। যতবার দেখতাম ততবারই ভাবতাম আমেরিকার মত দেশে নিজের মত করে কিছু করা সহজ কথা নয়। জানতে পারলাম ঐসব ইহুদীদের এলাকা। ওরা নিজেদেরকে সবার থেকে আলাদা করে রাখতে চায়। ভাবুন ইহুদীরা কতটা শক্তিশালী হলে ওরা আমেরিকায় নিজেদের ইচ্ছে মতন বাইন্ডারী ঘেরা এলাকায় থাকতে পারে।। শুনেছি ওদের স্কুলও নাকি আলাদা।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে আমেরিকার এত খালি জায়গায় থাকতে কেন “ইসরাইল” নামক একটি রাষ্ট্র “ফিলিস্তিনের” ভিতর থেকে নিতে হলো? আমেরিকার এত জায়গা এখানে ইচ্ছে করলে ১০০ “ইসরাইল” নামক রাষ্ট্র করলেও আমেরিকার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হতো না। আসলে সবই রাজনীতির খেলা। আমেরিকার বড় বড় ব্যবসাগুলো নাকি ইহুদীরা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তারা তাদের ইচ্ছাগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারছে অতি সহজে।
ইউএসএ তে গরমের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। ২০১০এ নাকি রেকর্ড করার মত গরম পড়েছিল। গরমের সময় প্রচন্ড সূর্য তাপ নেই কিন্তু একটা লু হাওয়া বইত যা খুব অসহ্যকর ছিল। ইচ্ছে হতো দৌঁড়ে ঘরে ঢুকি। আমাদের দেশে আমি ঐ রকম লু হাওয়া বইতে দেখিনি।
শীতের সময় যেদিন সূর্য উঠত সবাই খুব খুশি থাকত আর বলতো আজ সানিডে। কিন্তু সেই সূর্যের প্রখর আলো থাকলেও তা থাকত নিস্তেজ। আপনি রোদে বের না হলে বুঝতে পারবেন না ঐ সূর্যের তেজের খেলা। আমি এমন সানিডে কে বলতাম ফানি সানিডে।
আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে কাছাকাছি তেমন একটা বাঙ্গালী/ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানী দোকান ছিল না। সাধারণত ঐ দোকানগুলোতে আমাদের দেশীয় সব কিছু পাওয়া যায়। আমাদেরকে আমেরিকার দোকানগুলোর উপরই বেশীরভাগ সময় নির্ভর করতে হতো।
গ্রোসারী শপে খুব সুন্দর সিদুঁর আম দেখে কেনার লোভ সামলানো দায়। কিন্তু খেয়ে একটুও স্বাদ পেতাম না। মনে হতো আমাদের দেশী আম দেখতে অত সুন্দর না হলেও তার স্বাদ অতুলনীয়। আমেরিকানরাও আমাদের দেশি আম খেয়ে খুব প্রশংসা করেছে।
খুব মিস করতাম আমার দেশীয় ফল পেয়ালা, তালের শাঁস, গাব, কৎবেল এরকম হাজারো ফল। আহা আল্লাহ আমাদের মাটিকে কত খাঁটি করে বানিয়েছেন। একেক ঋতুতে একেক ফল। খুব সাধারণ ফল অথচ কত মজার। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন শাক-সবজি, ফল-মূলে ভরা আমার সোনার দেশ। আল্লাহ আমাদেরকে খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধি না করলেও মহা মূল্যবান ‘মাটি সম্পদে’ সমৃদ্ধি করেছেন।